Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এই যাত্রা যেন শেষযাত্রা না হয়’


২৬ জুলাই ২০২০ ২১:৪৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‌‘জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমাকে। এই যাত্রা যেন শেষযাত্রা না হয়।’— রোববার (২৬ জুলাই) সকালে নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে এভাবেই সুস্থ হয়ে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন চট্টগ্রামের হালিশহরের পোর্ট কানেকটিং সড়কে একটি কমিউনিটি সেন্টারে গড়ে তোলা ১০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টারের প্রধান উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর একদল তরুণকে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে তোলেন তিনি। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে এই আইসোলেশন সেন্টার শুরু থেকেই সাড়া ফেলে। দিনরাত নিরবচ্ছিন্নভাবে কোভিড রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাজ্জাত। ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে তার নিজের জীবনই এখন সংকটে।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর কয়েকদিন ধরে অসুস্থ সাজ্জাত নিজের আইসোলেশন সেন্টারেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার তাকে করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত সরকারি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের পোর্ট কানেকটিং সড়কে প্রিন্স অব চিটাগং নামে একটি কমিউনিটি সেন্টারে গড়ে তোলা ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারটির যাত্রা শুরু হয় গত ১৩ জুন। করোনার সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রামে যখন চিকিৎসা নিয়ে হাহাকার তখন এই আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সংস্কৃতিকর্মী মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। এ সময় তার সঙ্গে যুক্ত হন আইনজীবী জিনাত সোহানা চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমানসহ সংগঠনটির একদল নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা।

করোনা আইসোলেশন সেন্টার, চট্টগ্রাম নামে এই চিকিৎসা কেন্দ্রে করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গ আছে এমন রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে শুরু থেকেই। একই সময়ে চট্টগ্রাম নগরীতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আরও কয়েকটি হাসপাতাল-আইসোলেশন সেন্টারে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা শুরু হয়। কিন্তু শুরু থেকেই তরুণদের এই আইসোলেশন সেন্টারেই রোগী ভর্তির হার বেশি। আর রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিকভাবে আইসোলেশন সেন্টারেই অবস্থান করেন সাজ্জাত হোসেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে থেকেই সাজ্জাতের শরীর খারাপ হতে শুরু করে। করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। পরে নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আইসোলেশন সেন্টারে আইসিইউ নেই। সেজন্য রোববার সকালে তাকে জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।

করোনা আইসোলেশান সেন্টারের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাজ্জাতের ফুসফুস প্রায় ৬০ ভাগ আক্রান্ত। এই সংক্রমণটা গুরুতর। সেজন্য শ্বাসকষ্ট আছে। আইসোলেশন সেন্টারে নিয়মিত রোগীদের সংস্পর্শে যেতেন সাজ্জাত। তাদের কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করছি।’

করোনা আইসোলেশন সেন্টারের প্রধান সমন্বয়কারী নুরুল আজিম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাজ্জাত ভাই একদম শুরু থেকেই আইসোলেশন সেন্টারেই থাকছেন। করোনায় আক্রান্ত হলেও প্রথমদিকে ভালো ছিলেন। এখন ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। শ্বাসকষ্টও আছে। চিকিৎসকের পরামর্শে উনাকে আইসোলেশন সেন্টার থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন নিয়ে চালু হওয়া এই সেন্টারে প্রায় ৩০০ রোগী এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন। আইসোলেশান সেন্টারটিতে এখন সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে। এছাড়া হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম আছে। রোববার এই আইসোলেশান সেন্টারে ৩৭ জন রোগী ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন নুরুল আজিম রনি।

১০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার আইসিইউ সাপোর্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) টপ নিউজ মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন শেষযাত্রা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর