Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে’


২৬ জুলাই ২০২০ ২২:৪৩

ঢাকা: করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের টিকিয়ে রাখতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের টিকিয়ে রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। খামারি ও চাষীদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ।’

রোববার (২৬ জুলাই) নর্দান ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ইয়ুথ এন্টারপ্রেনিয়রশিপ ফর বুস্টিং রোরাল এগ্রিকালচার ইকোনমি শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ ফুল চাষীদের সহায়তা করতে। আবার বন্যার কারণে এবার আমনে বেশ ক্ষতি হবে, সেই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককে রবি মৌসুমে বিভিন্ন প্রণোদনা ও সাহয্য-সহযোগিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘মার্চের ২৬ তারিখ লকডাউন শুরু হয়। পরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে কৃষি পণ্যের পরিবহনে বাধা সৃষ্টি হয়। চাষীরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাদের উৎপাদিত ফল, সবজি, তরমুজ, টমোটোতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরে আলোচনা করে কৃষি পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা করা হয়। কাজেই সরকার চেষ্টা করছে। পরিবহনের কারণে চলতি মৌসুমে আম চাষীরা খুশি। তারা কিছুটা হলেও দাম পেয়েছে। রেলওয়ের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ টন আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবহণ করা হয়েছে। তারপরেও কৃষক সঠিক মূল্য সব পণ্যের ক্ষেত্রে পাচ্ছে না। আমার মনে হয় গরু বিক্রি করে চাষীরা এবার লাভবান হবে না। গরু পালনে অনেক খরচ। কিন্তু তারা এবার হয়তো ভালো দাম পাবে না। এগুলো দুশ্চিন্তারই কারণ। সরকার কিন্তু তারা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার জন্য ৪ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আমরা এমনিতেই প্রতিবছর ঋণ দেই, সেটা ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে। এবার এক্ষেত্রেও সুদের হার কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। কাজেই ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আমরা ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে বিশেষ বিবেচনায় ফুল চাষীদের সহায়তা দেওয়া হয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের নীতি হচ্ছে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। আমরা এখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ, আধুনিকীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ করতে। কয়দিন আগেই কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেখানে কৃষকের যন্ত্র ক্রয়ে সরকার ৫০ শতাংশ ভতুর্কি দেওয়া হবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নে পথে ও সমৃদ্ধির পথে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে কৃষি এখনো অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। কৃষি শুধু ফসল নয়, বাংলাদেশের কৃষি হচ্ছে মৎস্য চাষ, গরুর খামার, পোল্ট্রি খামার। এগুলোর ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। আমি সব সময় আশাবাদী মানুষ। আগামী প্রজন্ম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল তারা অবশ্যই অর্জন করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা যখন ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি হচ্ছে, তখন তাদের মধ্যে দেশ প্রেমের ঘাটতি দেখা যাচ্চে। যখন ভর্তি হচ্ছে তখনই মনে করছে কবে ইউরোপ বা আমেরিকায় যাবে। কেন আমাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশ চলে যাচ্ছে, আমার মনে হয় এটা নিয়ে স্টাডি করা উচিৎ। ছেলে মেয়েদের কেন আমরা রাখতে পারছি না। এটা নিয়ে মনে হয় আমাদের গবেষণা করা দরকার। ছেলে মেয়েদের দেশমুখী, শহরমুখী ও গ্রাম মুখী করা উচিৎ।‘

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক শাইখ সিরাজ বলেন, ‘গ্রামের তরুণরাই এ দেশের কৃষির ধারক ও বাহক। সবচেয়ে কমমূল্যে এখন প্রোটিন পাওয়া যাচ্ছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকায় এক কেজি পাঙ্গাস মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এটা করেছে এ দেশের গ্রামীণ তরুণরা। কৃষক এ দেশে তার পেশা কৃষিকে আরও বহু আগেই ছেড়ে দিতো, যদি তাদের বিকল্প পেশা থাকতো। এ দেশে কৃষিকে আমরা অনেক অবহেলা করেছি। কিন্তু এখন সয়েল লেস কৃষির যুগে আমরা প্রবেশ করেছি। গ্রীণ হাউজের ভেতরে কৃষি হচ্ছে। সেখানে তো তরুণ উদ্যোক্তারা সুট, কোট পরেও কৃষি করতে পারবে। দেশে কৃষির উন্নতি হয়েছে, কিন্তু কৃষকের কোনো উন্নতি হয়নি। কৃষিতে এখন প্রযুক্তির সুদিন এসেছে। শিক্ষিত তরুণরা যখন প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে যুক্ত হবে তখন উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে যাবে। শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তারা আমাদের কৃষির সঙ্গে যুক্ত হলে গোটা কৃষি ব্যবস্থায় একটা বিরাট পরিবর্তন আসবে।’

অনুষ্ঠানে আরও যুক্ত ছিলেন নর্দান ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসাইন, প্রো. ভাইস চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার মো. হুমায়ুন কবির, এনইউবি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মো. আবদ্দুল্লাহ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ড. এস এম বখতিয়ার।

ঋণ করোনা কৃষক ভাইরাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর