ঢামেকে ১৩০ জনের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ, ৫০ জনকে প্রয়োগ
২৭ জুলাই ২০২০ ১৭:২২
ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত করোনাজয়ী ১৩০ জনের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢামেকে ভর্তি ৫০ জন রোগীকে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৭ জুলাই) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন এ তথ্য জানান।
একে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া ১৩০ জন রোগী স্বেচ্ছায় প্লাজমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি ৫০ জন রোগীর শরীরে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের রোগীদের দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, নার্সসহ অনেকেই স্বেচ্ছায় এই প্লাজমা দিয়েছেন। প্লাজমা পদ্ধতিতে অনেক রোগী সুস্থ হয়েছেন।’
এর আগে গত ১৬ মে করোনাজয়ী তিন চিকিৎসকের রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়। ঢামেক নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্লাজমা সংগ্রহ শুরু উদ্বোধন করেছন পরিচালক একেএম নাসির উদ্দিন।
ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘পুরো বিশ্ব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমরাও আক্রান্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুরু হয় প্লাজমা নেওয়া। আমরা করোনাজয়ী তিন চিকিৎসক দিয়ে শুরু করেছিলাম। এরপর অনেকেই প্লাজমা দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন।‘
এর আগে ঢামেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও প্লাজমা থেরাপি সাব কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান এর সুফল সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল এক্সপান্টেড এক্সেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্লাজমা থেরাপির সুফল বা এর কার্যক্রম সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারি। এর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে একটি পরিকল্পনা নিতে হবে।’
ডা. খান জানান, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ প্লাজমা সংগ্রহ করবে। তারা এসোপি তৈরি করবে এবং এসোপির মাধ্যমে কাদের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে, কতখানি প্লাজমা কীভাবে সংগ্রহ করা হবে, কি পরিমাণে প্রয়োগ করা হবে- এগুলো লিপিবদ্ধ থাকবে। প্লাজমা প্রয়োগের আগে অবশ্যই অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে হবে। কেননা এই প্লাজম দেওয়ার জন্য এফডিএ একটি অ্যাপ্রোভাল দিয়েছে। সেটা হলো- আইএনডি অর্থাৎ ইনভেস্টিগেশনাল নিউ ড্রাগস হিসেবে।
তিনি বলেছিলেন, ‘এই পরিকল্পনার মাধ্যমে যদি আমরা প্লাজমা ডিসট্রিবিউশন করি তাহলে একটা তালিকা থাকবে। কাদের প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে এবং কি পরিমাণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে- সেই ডাটাগুলো সংরক্ষণ থাকবে। করোনা থেকে সুস্থ্য হওয়া রোগীর কাছ থেকে যে প্লাজমা নেওয়া হয়, তার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিবডি থাকে। যা করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে গিয়ে ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। তখন ভাইরাসটা আর কোষের মধ্যে ঢুকতে পারে না।’
প্লাজমা থেরাপি সাব কমিটির প্রধান বলেন, ‘যদি কাউকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমরা এই প্লাজমা থেরাপি দিতে পারি তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। আর করোনা রোগী যখন আইসিইউতে চলে যায় অথবা যখন ভেন্টিলিটরে থাকে তখন তার লাঞ্চ ড্যামেজ হয়ে যায়। তখনই প্লাজমা থেরাপি দিলে কাঙিক্ষত ফল নাও পাওয়া যেতে পারে। এজন্য প্লাজমা থেরাপির জন্য টাইমিংটা অনেক বেশি প্রয়োজন। কখন দেবো? কাকে দেবো?- এটি খুব প্রয়োজনীয় বিষয়।’
ডা. খান বলেছিলেন, ‘কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোন ভ্যাকসিন অথবা কোনো ওষুধ না থাকায় রোগীদের প্লাজমা থেরাপি নেওয়ার আগ্রহ বেড়ে চলেছে। সে অনুপাতে আমরা কাঙ্ক্ষিত ডোনার পাচ্ছি না। তাই আহ্বান জানাবো, যারা করোনাজয়ী তারা যেন প্লাজমা ডোনেট করেন। কারণ আপনার থেকে নেওয়া প্লাজমা দুজন কিংবা তিনজনকে দেওয়া হবে। যারা প্লাজমা ডোনেট করবেন তাদের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তার শরীরে অ্যান্টিবডি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
একেএম নাসির উদ্দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে থেরাপি প্লাজমা সংগ্রহ