মানসম্পন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু করেছে বিপিসি
৩১ জুলাই ২০২০ ১২:৪০
ঢাকা: মানহীন জ্বালানি তেল বিক্রি থেকে সরে আসছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। মানসম্মত পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদনে ব্যর্থ হওয়ায় ১১টি বেসরকারি রিফাইনারিতে কনডেনসেট বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতিকালে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরও শুরু হয়েছে। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বরাদ্দ বাতিল নয়, নিম্নমানের তেল উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
দেশে যেসব জ্বালানি ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে প্রধান তিনটি জ্বালানি তেল হলো অকটেন, পেট্রোল এবং ডিজেল।
দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উপজাত বা কনডেনসেট পরিশোধন করে উৎপাদিত হয় এই পেট্রোল-অকটেনসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল। এর মধ্যে চাহিদার চেয়েও বেশি উৎপাদন হয় প্রেট্রোল ও অকটেন। কিন্তু দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া এ দুই জ্বালানির একটিও আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়। এই দুই জ্বালানির পাশাপাশি আমদানি নির্ভর ডিজেলে নিম্মমানের পেট্রোল মিশিয়েও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করা হয়ে থাকে, এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। আর এতে তেল চালিত গাড়ির এবং কৃষিক্ষেত্রে সেচ পাম্পের যন্ত্রের কার্যক্ষমতা ও জীবনসীমা কমছে। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
জানা যায়, সরকারি খাতের তিনটি ও বেসরকারি খাতের ১৪টি রিফাইনারি (কনডেনসেট ফ্রাকসনেশন প্লান্ট) পেট্রোবাংলার কাছ থেকে কনডেনসেট গ্রহণ করার পর প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, সলভেন্ট, মোটর স্প্রিট, কেরোসিন সুপিরিয়র অয়েল, মিনারেল, তারপেন্টাইনসহ বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করে।
এগুলো দৈনিক প্রায় ১২ হাজার ব্যারেল কনডেনসেট প্রক্রিয়া করতো। কিন্তু বেসরকারি ১২টি কোম্পানি কনডেনসেট প্রক্রিয়া না করেই সরাসরি অথবা ভেজাল মিশিয়ে তেল বিক্রি করতো বলে জানা যায়।
অথচ আইন অনুযায়ী বাজারজাত করার আগে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেলের মান পরীক্ষা করে বিএসটিআই থেকে সনদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বিপিসি কখনোই মান পরীক্ষা করায়নি এবং সনদও নেয়নি। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে যেমন মানহীন ভেজাল তেল দেদারসে বিক্রি হয়েছে। তেমনি মানহীন ভেজাল তেল সরবরাহ নিশ্চিতও করা যায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষ দিকে মানসম্মত তেল সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিন আইনজীবি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। গত ২৭ জানুয়ারি আদালত বিপিসিকে বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান সনদ গ্রহণ করে তেল বিক্রির নির্দেশ দেয়। বেসরকারি যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান মানহীন তেল উৎপাদন করতো তাদের মধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান পেট্রোল ও অকটেনের জন্য বিএসটিআই নির্ধারিত মান অর্জনে সক্ষম হয়নি বলে চলতি মাস (জুলাই) থেকেই বেসরকারি মোট তিন প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠানকে কনডেনসেট বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান জানান, এখন থেকে ভেজাল এবং মানহীন জ্বালানি সরবরাহ করা হবে না। তাছাড়া এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। সেই রায় মেনেই চলতে হবে বিপিসিসহ সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, এখন থেকে পেট্রোলের পাশাপাশি বিএসটিআই নির্ধারিত মানের ডিজেল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে বিপিসি। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, এটা খুব ভাল উদ্যোগ। তবে দুর্ভাগ্য হলো মানসম্মত তেল সরবরাহে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে হলো। তবে এই ভেজাল তেল বিক্রির সঙ্গে যারা এতদিন জড়িত ছিল, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত।
দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমানের তেল উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ছিল বিশেষজ্ঞদের। তেলের মান নিয়ন্ত্রণে এই উদ্যোগের ফলে পরিবহনের জ্বালানি খরচ, যন্ত্রপাতির আয়ু বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশের সুরক্ষা হবে বলে জানান তারা।