ঈদে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা, সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় পুলিশ
২৭ জুলাই ২০২০ ২০:০৮
ঢাকা: আসন্ন ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সারাদেশে যেকোনো স্থানে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে পুলিশকে। এজন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে ইউনিট প্রধানদের চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৭ জুলাই) পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া পুলিশ সদর দফতর থেকে ইউনিট প্রধানদের পাঠানো চিঠির একটি কপি সারাবাংলার কাছে রয়েছে।
গত ২৩ জুলাই পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি অপারেশনস-১) সাইদ তারিকুল ইসলামের সই করা এক চিঠির মাধ্যমে জঙ্গি হামলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। বিশেষ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ জঙ্গিসংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দেশে এমন অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের আদলে গঠন করা নব্য জেএমবির সদস্যরা হত্যাকাণ্ড, নাশকতা ও ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দফতর সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ জঙ্গিসংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, তথাকথিত আইএস আসন্ন ঈদুল আজহায় কথিত ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণত বড়ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমেই ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় আইএসের দেশীয় অনুসারী নব্য জেএমবির সদস্যরা হামলা পরিচালনাসহ যেকোনো জঙ্গি হামলা বা বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। তাই পুলিশের সব ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকা জরুরি।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ (পুলিশের কোনো টিম, স্থাপনা বা যানবাহন) বিমানবন্দর, তিন দেশের দূতাবাস ভবন বা দূতাবাস সংশ্লিষ্ট বিশেষ ব্যক্তিকে টার্গেট করা হতে পারে। এছাড়া শিয়া-আহমদিয়া উপাসনালয়, মাজার কেন্দ্রিক মসজিদ, চার্চ, প্যাগোডা, মন্দিরগুলোকেও টার্গেট করা হতে পারে। হামলার সম্ভাব্য দিন-তারিখ উল্লেখ না থাকলেও হামলার সময় সকাল ৬টা থেকে ৭টা অথবা সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০টায় হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে।
হামলাকারীর পরিচয়ের বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, হামলাকারীর বয়স ১৫-৩০ বছরের মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার চেহারা ক্লিন শেভড বা দাড়ি থাকতে পারে, গোঁফহীন হতে পারে। তার পরনে শার্ট/টিশার্ট, প্যান্ট, ক্যাপ মাস্ক, কেডস এবং পেছনে ব্যাকপ্যাক থাকতে পারে।
হামলার সময় হামলাকারী কোন ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন তাও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। যেমন হাতে বানানো গ্রেনেড, আইএডি, রিমোট কন্ট্রল বোমা ও ছুরি কিংবা চাপাতি ব্যবহার করতে পারে জঙ্গিরা।
রংপুর রেঞ্জের একজন পুলিশ সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর পুরো ইউনিটকে সতর্ক থাকতে বলেছি। ঈদগাহ ময়দান, মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জঙ্গি হামলা ঠেকাতে পুলিশ সদর দফতরের সুপারিশ
উগ্রপন্থি বা তাদের সংগঠনের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি, পুলিশের সবাইকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখা, পুলিশের গাড়ি-স্থাপনা খালি বা পরিত্যক্তভাবে ফেলে না রাখা, পুলিশের ভবনগুলোতে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা ও পরিচয় নিশ্চিত করা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো, চেকপোস্টে তল্লাশি বাড়ানো, সন্দেহ হলে ব্যাগ-দেহ তল্লাশি করা, সন্দেহজনক এলাকায় ব্লক রেইড করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশ সব সময় সতর্ক অবস্থানে থেকে কাজ করছে।’ চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সকল উৎসব এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আগে সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিটকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এবারও তেমনটি করা হয়েছে।’
এদিকে পুলিশ সদর দফতর থেকে জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২৫ জুলাই রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের সামনে থেকে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধারের পর তা নিষ্ক্রিয় করা হয়। পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট জানায়, ওই হ্যান্ড গ্রেনেডটি একজন সার্জেন্টের মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা ব্যাগে পাওয়া যায়। ওই সার্জেন্ট মোটরসাইকেল রেখে কিছুক্ষণের জন্য অন্য জায়গায় গিয়েছিলেন। ফিরে দেখেন তার ব্যাগে ওই গ্রেনেডটি। নিষ্ক্রিয় করার পর জানা যায়, সেটি ছিল একটি লোকাল হ্যান্ড গ্রেনেড। সেটির ভেতর থেকে আইএডি উদ্ধার করা হয়েছে।