রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার দাফন, তোপের মুখে এসিল্যান্ড
২৭ জুলাই ২০২০ ২০:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় সময়মতো প্রশাসনের কর্মকর্তারা না যাওয়ায় ক্ষুব্ধ লোকজন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই এক মুক্তিযোদ্ধার দাফন সম্পন্ন করেছে। পরে এলাকায় গিয়ে জনতার তোপের মুখে পড়েন বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। এ নিয়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (২৬ জুলাই) দুপুরে ৮৫ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ মারা যান।
তিনি বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন। তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা মৌলভী ছৈয়দ আহমদ পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদ করতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সামরিক সরকারের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়।
মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে সোমবার সকালে জানাজা শেষে আলী আশরাফের লাশ গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ইউনিয়নের লালজীবন গ্রামে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আলী আশরাফের ছেলে জয়নাল আবেদিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার আব্বা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউএনওকে বিষয়টি জানানো হয়। দাফনের সময়ও জানানো হয়। ইউএনও নিজেই বলেছেন, সকাল ১১টার দিকে তিনি পৌঁছাবেন। সে অনুযায়ী আমরা অপেক্ষা করতে থাকি। সকাল ৯টার দিকে পুলিশের টিম এসে পৌঁছে। কিন্তু ইউএনও আর আসেন না। আমরা যোগাযোগ করলে বলেন- তিনি সরকারি কাজে ব্যস্ত আছেন, এসি-ল্যান্ড আসবেন। পৌনে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও যখন কেউ আসেননি, তখন আমরা স্থানীয় মুরব্বিদের পরামর্শে দাফন করে ফেলি।’
‘লাশ দাফনের আরও প্রায় ১৫ মিনিট পর এসি-ল্যান্ড এসে পৌঁছান। তখন স্বাভাবিকভাবে মানুষ একটু ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা উনাকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ করেছে। খবর পেয়ে ইউএনও আমাদের বাড়িতে আসেন। পরে উনারা কবর জেয়ারত করে চলে যান। উনারা কবরের সামনে গার্ড অব অনার দিতে চেয়েছিলেন। আমরা রাজি হইনি।’ বলেন জয়নাল আবেদিন
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি সরকারি একটি কর্মসূচিতে ছিলাম। সেজন্য এসি-ল্যান্ডকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তার গাড়ি মাঝপথে আটকে যায়। রাস্তার দুইপাশে জানাজায় আসার লোকজনের সিএনজি অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। রাস্তায় প্রচুর লোকজন হেঁটে জানাজাস্থলের দিকে যাচ্ছিল। এজন্য এসি-ল্যান্ডকেও দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। এজন্য দেরি হয়ে যাওয়ায় উনারা লাশ দাফন করে ফেলেন। আমর কবর জেয়ারত করেছি ও ফুল দিয়েছি। গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য আমরা রেডি ছিলাম। কিন্তু উনারা বলেছেন, এটি শরীয়তসম্মত হবে না। তখন আমরা ফিরে আসি।’
রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই একজন মুক্তিযোদ্ধার দাফন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা ও জনপ্রতিনিধির অবহেলার শিকার হয়ে মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাননি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।