স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ধর্মীয় বিধান পালন করা সম্ভব
২৭ জুলাই ২০২০ ২৩:০৮
ঢাকা: ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আইন প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না, তাতে ধর্মীয় বিধি-বিধানও রক্ষা হয়।
সোমবার (২৭ জুলাই) ‘মহামারিতে কোরবানি-ইসলাম কি বলে’ শীর্ষক সারাবাংলা ফোকাস অনুষ্ঠানে বক্তারা একসব কথা বলেন।
সারাবাংলা.নেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এম এ কে জিলানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন, ইসলামী চিন্তাবিদ ফাহিম তানভীর আহমেদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন।
মহামারি করোনাভাইরাসসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় ইসলাম কি বলে সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামী চিন্তাবিদ ফাহিম তানভীর আহমেদ বলেন, ‘করোনার এই দুর্যোগ অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। যুগে যুগে পৃথিবীতে এমন অনেক দুর্যোগ এসেছে। এ অবস্থায় ইসলাম ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে বলেছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এ বিষয়ে সুনিদির্ষ্ট কিছু উপদেশ দিয়ে বলেছেন, কোনো জনপদে যখন কোনো মহামারি দেখা দেবে তখন ওই জনপদের মধ্যে যারা থাকবে তারা বের হবে না এবং অন্যরা সেখানে প্রবেশ করবে না। মহামারি থেকে সবাইকে সাবধানে থাকতে বলেছেন।’
অর্থাৎ মহামারি থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখা এবং অন্যকেও নিরাপদ রাখা। ইসলামের মূল কথাই হলো আমি যেন অন্যের ক্ষতির কারণ না হই।
করোনার সময় জামাতে নামাজ আদায়ের বিষয়ে ইতোপূর্বে অনেক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এ আলোচক বলেন, ‘ইসলামী স্কলাররা একটি বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছেন, যেহেতু করোনা থেকে রক্ষার জন্য সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হয়েছে। এ কারণে জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে এখন মুসল্লিরা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করছেন। এটি শুধু আমাদের দেশেই না। মক্কা-মদিনাসহ পৃথিবীর সব জায়গাতেই এখন এটি পালন করা হচ্ছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, ‘মানুষ ব্যক্তি পর্যায় থেকে যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাহলে কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। জনসাধারণকে তাদের নিজেদের রক্ষার জন্যই স্বাস্থ্য বিধিমালা মেনে চলা উচিত। তাহলে এই মহামারি রোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’
কোরবানির সময় সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোরবানির সঙ্গে যেমন ধর্মীয় বিধি-বিধান যুক্ত আছে তেমনি এর সঙ্গে মানুষের জীবন জীবিকারও সম্পর্ক রয়েছে। একজন কৃষক সারাবছর ধরে তার প্রাণীটি লালন পালন করেছেন কোরবানিকে সামনে রেখে। এখন যদি বিক্রি করতে না পারেন তাহলে কিন্তু তার জীবিকা সংকট তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত এই বন্যার মধ্যে তার প্রাণীটি লালন পালন মহা সংকটে ফেলবে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই স্বাস্থ্য বিধি মেনে পশুর হাট দেওয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই বলছি, ব্যক্তি পর্যায়ে সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই করোনাভাইরাস রোধ করা সম্ভব হবে।’
স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে কোরবানি যাতে বন্ধ না হয় সে বিষয়টি উল্লেখ করে ইসলামী চিন্তাবিদ ফাহিম তানভীর আহমেদ বলেন, ‘একদিকে মহামারি করোনা, অন্যদিকে বন্যায় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত প্রায়।’ এ অবস্থায় সামর্থবানদের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কোরবানী দেওয়ার আহবান জানান তিনি। প্রয়োজনে সামর্থবানদে বন্যাদুর্গত এলাকায় কোরবানি দেওয়ার জন্য বলেন। তাতে করোনায় কোরবানির হক আদায় হবে এবং অসহায় মানুষের সাহায্যও করা হবে।