রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন ও আয়-ব্যয়— ২ ইস্যুতে ইসিতে যাচ্ছে আ.লীগ
২৯ জুলাই ২০২০ ১১:০৭
ঢাকা: রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নতুন খসড়া আইনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানানোর জন্য সময় বাকি আছে মাত্র দুই দিন। এদিকে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার জন্যও সময় আছে আর দুই দিন। দুই ‘ইস্যু’তেই সময় শেষ হচ্ছে ৩১ জুলাই। এই দুই ইস্যুতেই নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির পৃথক দুইটি প্রতিনিধি দলের একটি খসড়া ওই আইন নিয়ে দলের মতামত জানাতে এবং অন্যটি দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে হাজির হবে কমিশনে।
দলীয় সূত্র বলছে, বুধবার (২৯ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান— এই তিন জনের সমন্বয়ে প্রতিনিধি দলটি যাবে ইসিতে। তারা রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন নিয়ে দলের মতামত জমা দেবেন।
অন্যদিকে বিকেল ৩টার দিকে অন্য একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের বাৎসরিক উপার্জন ও খরচের হিসাব জমা দেবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইসি আমাদের চিঠি দিয়েছিল। তারা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিয়ে নতুন খসড়া আইন বিষয়ে আমাদের মতামত চায়। দুপুর ১২টার দিকে একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে আমাদের মতামত ইসির কাছে তুলে ধরবে। আর বিকেল ৩টার দিকে আমাদের আরেকটি প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে ২০১৯ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাবে জমা দেবে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়ে প্রথমে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে মতামত চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ১৬ জুন ওই ঘোষণা দেওয়ার পর ৭ জুলাই পর্যন্ত বলতে গেলে কেউই ইসিতে এ বিষয়ে মতামত দেয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে মতামত জানাতে সময় বাড়ানোর অনুরোধও করা হয়। পরে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মতামত দেওয়ার সুযোগ করে দেয় ইসি।
দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন, নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ বাংলায় অনুবাদ করে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের নতুন একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। এ বিষয়ে দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, এই আইনটি বাংলায় প্রণয়নের বিষয়টি ইতিবাচক। কারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব আইন আছে, সেগুলো বাংলাতেই থাকা উচিত। তাতে করে আইনের সঙ্গে মানুষের বোঝাপড়া স্পষ্ট হওয়ার সুযোগ বাড়বে। তাই বাংলায় আইন প্রণয়ন খুবই ভালো উদ্যোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের দলীয় সভাপতির নির্দেশনায় একটি মতামত তৈরি করা হয়েছে। দলের একজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীর একজনকে আইনটির বিষয়ে খসড়া মতামত তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা একটি খসড়া করেছিলেন। সেটি আবার দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তারা দেখে কিছু সংশোধন, সংযোজন-বিয়োজন দিয়েছেন। সেগুলো অন্তর্ভুক্তির পর মতামতটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর সেটিই নির্বাচন কমিশনে নিয়ে যাচ্ছেন আবদুস সোবহান গোলাপ, বিপ্লব বড়ুয়া ও সায়েম খান।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে আওয়ামী লীগ প্রতিবছরই দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়ে থাকে কমিশনে। এ বছর ৩১ জুলাই ইসিতে এই আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করার শেষ তারিখ। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এই সময়সীমা মাথায় রেখেই করোনাভাইরাস প্রকোপের মধ্যেও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা গণভবনে দলের কয়েকজন নেতাকে এ কাজে নিয়োজিত করেন। দলের কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান ও দফতর সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন।
দলের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের দল পরিচালনায় একটি স্বচ্ছতা আছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বচ্ছভাবে জবাবদিহিতামূলক বিধি অনুসরণ করেন। তাই দলের আয়-ব্যয়ের হিসাবও সার্টিফায়েড চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট (সিএ) বা সিএ ফার্মের মাধ্যমে করানো হয়। এ বছরও সে হিসাব চূড়ান্ত হয়েছে। বিকেলে সে হিসাব ইসিতে জমা দেবে প্রতিনিধি দল।
আওয়ামী লীগের আয়ের খাতগুলো তুলে ধরে নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। দলের সব নেতাদের চাঁদা দিতে হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, দলের উপদেষ্টা কিংবা দলের জাতীয় কমিটির সদস্য, দলের মনোনীত সংসদ সদস্য, অর্থ্যাৎ দলের সব স্তরের নেতাদের প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা দিতে হয়। দলীয় সভাপতি নিজেও এই চাঁদা দেন। দলের আয়ের এটি একটি বড় খাত। এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রিতে থেকে বড় অংশের টাকা আসে। তবে খরচের খাতও কম নয়। গত বছর দলের ২১তম যে কাউন্সিল হয়েছে, তার পেছনে বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে গেছে।
গত বছরের আয়ের কথা তুলে ধরে নেতারা বলেন, গত বছর আওয়ামী লীগের আয় খুবই ভালো। আগের বছরের (২০১৮ সাল) হিসাবে দলের অ্যাকাউন্টে স্থিতি ছিল প্রায় সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। এবার (২০১৯ সালের হিসাবে) এই স্থিতি কিছুটা বেড়েছে। তবে কতটা বেড়েছে, সেটি এখনই বলা যাবে না। ইসিতে হিসাব জমা দেওয়ার পর সেটি হয়তো জানা যাবে।
এর আগে, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত বছর ইসি সচিবের কাছে ২০১৮ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছিলেন। ওই সময় জানানো হয়, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের আয় ছিল ২৪ কোটি ২৩ লাখ ৪২ হাজার ৭০৭ টাকা, খরচ ছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৭ টাকা। আর ওই বছর শেষে আওয়ামী লীগের তহবিলে মোট জমা ছিল ৩৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হিসাবে আরও জানানো হয়, ২০১৮ সালে দলটির সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি থেকে— ১০ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। এছাড়া অনুদান পেয়েছে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫৫ টাকা। আর ওই বছর বড় খরচ ছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন নির্মাণ— ১০ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১০০ টাকা।