Friday 04 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ চ্যালেঞ্জের মুখে অভিবাসন খাত


৩০ জুলাই ২০২০ ০৩:২৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের জনশক্তি রপ্তানি ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। একদিকে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ, অন্যদিকে বিদেশ থেকে যারা দেশে ফিরেছেন তারাও যেতে পারছেন না। আবার যারা বিদেশে অবস্থান করছেন তারাও সংকটে রয়েছেন। এই তিন চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংকটে ফেলবে বলে মনে করছেন দেশের অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। সেজন্য সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার ( ২৯ জুলাই) এক ওয়েবিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।

সুইস এজেন্সী ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি) এর সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনালের আশ্বাস প্রকল্প যৌথভাবে আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, বিশ্বে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মানবপাচারের শিকার। যার ৭০ ভাগই নারী। আর প্রতি বছর এই পাচারে দেড় বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়। মানবপাচারকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে তা সমাধানে বৈশ্বিক উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন।

বিজ্ঞাপন

অনলাইন আলোচনায় করোনা মহামারিকালে মানবপাচার, অনিরাপদ অভিবাসন, এ নিয়ে কী কী কাজ হচ্ছে, তাতে ভুক্তভোগীদের কী অবস্থা কী সেসব বিষয় তুলে ধরা হয়। বলা হয়, দেশে ৬ হাজারেরও বেশি মানব পাচারের মামলা থাকলেও মাত্র ২ শ মামলার বেশি নিষ্পত্তি করা যায়নি।

এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। সুপারিশ জানান, ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার। পাশাপাশি বিদেশে লেবার উইংগুলো আরো কার্যকর করা এবং সেগুলো ওপরে মনিটরিং বাড়ানোর প্রস্তাব আসে।

আলোচনায় প্রধান অতিথি হয়ে অংশ নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম মানবপাচারকে মানবাধিকরের চরম লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই মানবপাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব। বিদেশ গমনেচ্ছুদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, যারা বিদেশ যেতে চায় তাদের প্রশিক্ষণটা খুব জরুরি। কারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষ সহজে পাচারের শিকারের হয় না। যারা পাচারের শিকার হয়ে উদ্ধার হন তাদের মানাসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, যারা পাচারের শিকার হন তারা বিভিন্ন নির্যাতনের ফলে মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড হয়ে যান। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নজর দিতে হবে।

মানবপাচার বিষয়ক জাতীয় কমিটির দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মানবপাচারের সবচেয়ে বড় কারণ দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকা। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই পাচারকারিদের কবলে পড়তেন না।

তিনি বলেন, মানবপাচার রোধে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিনিয়োগ দরকার যাতে দেশের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি হয়।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোজাফফর আহমেদ বলেন, ট্রাভেল অ্যাজেন্সিগুলোর মাধ্যমেই মূলত মানব পাচার বেশি হয়ে থাকে। পাচারের শিকার তারাই হয় যাদের জানা শোনা কম এবং অদক্ষ। দক্ষরা পাচারের শিকার হন না। এ জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছে। প্রচারণা ও পাচারের অভিযোগে আমরা বিভিন্ন এজেন্সীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ঢাকার আদালতে ১১টি ফৌজদারি মামলা রুজ্জ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অনেক এজেন্সীকে জেল জরিমানাও করা হয়েছে। আমাদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, প্রতিবছরই মামলার সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় ছয় হাজার মামলা হলেও বিচার হচ্ছে না। ২০১৯ সালেও ৬২৫ টি মামলা হয়েছে কিন্তু মাত্র ৩৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আর কোভিড আমাদের সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ অনেক লোক বিদেশে যেতে পারছে না। অনেকে ফেরত এসেছেন। গত তিন বছরের সরকারি বেসরকারি সবার প্রচেষ্টার ফলে মানবপাচারে টায়ার ২ ওয়াচ লিস্ট থেকে আমাদের উন্নতি হয়েছে। সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

এনজিও ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন।

উইনরক ইন্টারন্যাশনাল এর আশ্বাস প্রকল্পের টিম লিডার দীপ্ত রক্ষিত সঞ্চালনায় অনলাইন আলোচনে সংশ্লিষ্ট অভিবাসন নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যুক্ত হোন।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর ৩০ জুলাই বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে। ২০১৫ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে দিনটি পালন করে আসছে। এবার ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই, ফ্রন্ট লাইন থেকে কাজ করি, মানবপাচার দমন করি’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ৩০ জুলাই দিবসটি নানা আয়োজনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পালন করা হবে।

অভিবাসন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ মানবপাচার দিবস