করোনায় কমেছে নতুন নোটের চাহিদা
৩০ জুলাই ২০২০ ২৩:০২
ঢাকা: প্রতিবছর ব্যাংকগুলো থেকে নতুন নোট জনগণ বিনিময় করার সুযোগ থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে এখন আর সে সুযোগ নেই। করোনার কারণে রোজার ঈদের মতো কোরবানির ঈদেও ব্যাংকগুলো সর্বসাধারণের মাঝে নতুন টাকা বিনিময় করেনি। ফলে অনেক সাধারণ মানুষ প্রিয়জনকে ঈদে নতুন টাকা সালামি হিসাবে দেওয়ার জন্য বিকল্প হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন বটতলা এবং গুলিস্থান থেকে নতুন নোট বিনিময় করেছেন। সে জন্য তাদের গুনতে হয়েছে বাড়তি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে নতুন নোট বিনিময় করেন এমন একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আগের মতো এবার নতুন নোটের চাহিদা নেই।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বটতলা ও গুলিস্তান মোড়ের নতুন নোটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে ফুটপাতে টেবিলের ওপর বিভিন্ন মূল্যমানের নতুন নোট সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। কিন্তু ক্রেতাদের আগের মতো সাড়া নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বটতলার নতুন নোট বিক্রেতা আমেনা বেগম বলেন, ‘গতবছরের চেয়ে এবার নতুন নোটের চাহিদা অনেক কম। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ বাইরে কম বের হওয়ায় নোটের বিনিময়ও কমে গেছে। একই কথা বলেছেন আব্বাস উদ্দিনও।’
তিনি বলেন, ‘গতবছর নতুন নোটের যে চাহিদা ছিল এবার তার অর্ধেকও নেই।’
অন্যদিকে গুলিস্তান মোড় থেকে ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘যে কোনো ১০০ পিস নোটে এক বান্ডিল করা হয়। আমরা প্রতি বান্ডিলে সমপরিমাণ টাকার চেয়ে বাড়তি ১০০ থেকে ২০০ টাকা নিচ্ছি। যেমন ৫০ টাকা নোটের ১০০ পিস টাকায় একটি বান্ডিলে ৫ হাজার টাকা থাকে। আমরা নিচ্ছি ৫ হাজার ১০০ থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকা।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের বটতলা ও গুলিস্তান মোড়ের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদা কমে যাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার বিনিময় মূল্য কমানো হয়েছে। আগে ১০ টাকার ১০০টি নোটের একটি বান্ডিল ১ হাজার ২০০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার তার চেয়ে কম নেওয়া হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে করোনার কারণে রোজার ঈদের মতো কোরবানির ঈদেও সর্বসাধারণের মাঝে নতুন টাকা বিনিময়ের সুযোগ রাখা হয়নি। তবে যারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন কিংবা এমন গ্রাহকদের নতুন টাকার বান্ডিল দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন না করে কেবল নতুন নোট বিনিময় করার কোনো সুযোগ এবার ব্যাংকগুলোতে রাখা হয়নি।
সূত্র জানায়, ঈদের আগের মাসের বেতন ও বোনাসের টাকা নতুন নোটে পাওয়ার আশা করেন অনেক চাকরিজীবীরা। এ ছাড়া ঈদের আগে সালামি ও বকশিসের জন্য নতুন টাকা সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি ফিতরা কিংবা দান-খয়রাতেও অনেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। এ জন্য প্রতিবছর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় নতুন টাকার জন্য সাধারণ মানুষ ভিড় করেন। এ সব কারণে প্রতিবছর দুই ঈদে নতুন টাকা বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা থেকে জনসাধারণের জন্য নতুন টাকা বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। গত রোজার ঈদে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট এবং গত কোরবানির ঈদে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়। এবার কোরবানির ঈদে ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন ছাড়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরই ঈদের আগে বাজারে নতুন নোট ছাড়া হয়। এ নোট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন ভাতার দেওয়ার সময় নতুন নোটের বেশ চাহিদা থাকে। এসব চাহিদার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এবার ২৫ হাজার কোটি টাকা নতুন নোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই টাকার একটা বড় অংশ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লেনদেনকালে গ্রাহকরা নতুন টাকা নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়াও এটিএম বুথেও গ্রাহকরা নতুন টাকা পাবেন। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে ভিড় এড়াতে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কোনো ব্যাংক আলাদাভাবে নতুন নোট বিতরণ করছে না।’
সূত্র জানায়, প্রতিবছর ঈদ-উল ফিতরের আগে বাজারে নতুন নোট ছাড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও নতুন নোট ছাড়া হবে। এই বছরের নতুন নোটের মধ্যে রয়েছে ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট। তবে সালামির ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি। আর বেতন ভাতা ও বোনাসের ক্ষেত্রে সাধারণ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোটের চাহিদা বেশি।
ঈদুল আজহা করোনাভাইরাস কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক