Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের আওতায় অনুমোদনহীন মাস্ক সরবরাহ


৩১ জুলাই ২০২০ ০০:০৫

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স আন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি)’ প্রকল্প। লক্ষ্য ছিল চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এই ভাইরাস মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা। অথচ এই প্রকল্পেরই বিভিন্ন অংশে উঠছে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ। বাজারমূল্যের প্রায় দ্বিগুণ দামে কাভারঅল পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) সরবরাহের জন্য অটোমোবাইল কোম্পানিকে কাজ দেওয়া, চুক্তির নির্ধারিত সময়ে কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম বুঝে না পেয়েও অগ্রিম টাকা প্রদান, ১০/১৫ লাখ টাকার মোবাইল অ্যাপ তৈরিতে পৌনে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ— এমন নানা অভিযোগ উঠে এসেছে সারাবাংলার অনুসন্ধানেই। এবার জানা গেল, অনুমোদনহীন মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে এই প্রকল্পে।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ইআরপিপি প্রকল্পে এক লাখ পিস কেএন৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেছে এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশনস লিমিটেড। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা এসব মাস্কের মান যাচাই প্রক্রিয়াতেও ছিল না কোনো স্বচ্ছতা। তবে অনুমোদনহীন মাস্ক সরবরাহ করেও এসআরএস এরই মধ্যে তুলে নিয়েছে পুরো কাজের বিল। প্রকল্পের কর্মকর্তারা এসব প্রসঙ্গে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল এক চুক্তির মাধ্যমে সাভারের এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ পিস কেএন৯৫ মাস্ক সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়। প্রতি পিস মাস্ক ৩৫০ টাকা মূল্যে মোট তিন কোটি ৫০ লাখ টাকার কাজ পায় প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রকল্প খাত থেকে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য এই মাস্ক বিতরণও করা হয়েছে। প্রকল্প সূত্র বলছে, বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা এক লাখ মাস্কের মধ্যে মাত্র দুই হাজার ৭৬০টি মাস্ক মজুত আছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি কেএন৯৫ মাস্ক তৈরি করে না। এই মাস্ক আমদানি করতে হয়। আর মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষাজাতীয় যেকোনো সরঞ্জাম আমদানি করতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ) থেকে অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র নিতে হয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে। এক্ষেত্রে যেকোনো প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিকভাবে বিপণনের জন্য মাস্ক বা অন্য পিপিই আমদানি করার অনাপত্তিপত্র নিতে পারে। সেক্ষেত্রে এভাবে আমদানি করা পণ্য সরকারি কোনো প্রকল্পে সরবরাহ করার সুযোগ নেই। সরকারি কোনো প্রকল্পের আওতায় সরবরাহ করতে হলে তার জন্য আলাদাভাবে অনাপত্তিপত্র নিতে হয় ডিজিডিএ থেকে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মুখপাত্র ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আইয়ুব আলী সারাবাংলাকে বলেন, বিদেশ থেকে কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম আনতে হলে অবশ্যই তাকে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশে কেএন-৯৫ মাস্ক উৎপাদিত হয় না, ফলে এটি আমদানি করতে হবে। আর তার জন্য অবশ্যই ডিজিডিএ’র অনাপত্তিপত্র বা এনওসি প্রয়োজন। এই অনাপত্তিপত্র ছাড়া কোনো পণ্য এসে থাকলে সেটি বেআইনি।

আর ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন, এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেড নামের কোনো প্রতিষ্ঠানকে কেএন৯৫ মাস্ক আমদানির জন্য কোনো অনাপত্তিপত্র দেয়নি ডিজিডিএ।

এদিকে, ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় যেসব সুরক্ষা সরঞ্জাম বা পণ্য সরবরাহ করা হয়, সেসবের মান যাচাইয়ে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির আহ্বায়ক স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী। তিনি সারাবাংলাকে জানাচ্ছেন, এই কমিটি এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের জন্য কোনো পণ্যেরই মান যাচাই করেনি।

ডা. শাহনীলা বলেন, এক মেইলে কেবল আমাদের কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছিল। পরে এ বিষয়ে আর কিছু জানায়নি। ওই কমিটি গঠন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ এর কার্যক্রম। ফলে কোনো পিপিই বা মাস্ক যাচাই করার প্রশ্নই নেই। এরকম কোনো কোম্পানির কোনো মাস্ক বা অন্য কোনো পণ্যের মান নিয়েও কিছু বলতে পারব না।

এ বিষয়ে জানতে এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমানের মোবাইল নম্বরে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সপ্তাহ দুয়েক আগে এসআরএসের মাস্ক সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরপরই সারাবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ইআরপিপি প্রকল্পের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কথা বলতে চান পরদিন। তবে এরপর গত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি আর এই প্রতিবেদকের ফোন ধরেননি। এমনকি অফিসে গেলেও তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করেননি।

ইআরপিপি প্রকল্পের পরিচালক ডা. কাজী শামীম হোসেনের মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে সরাসরি তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ডা. শামীম বলেন, আমি প্রকল্পে নতুন এসেছি। তাই এখন কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারছি না।

ইআরপিপি প্রকল্পের সুরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানও এই মন্ত্রণালয়ের নতুন যোগদানের ‘কারণ দেখিয়ে’ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন পায় ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স আন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি)’ প্রকল্প। এক হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার এই প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা অসঙ্গতি-অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে এই ছিল চতুর্থ পর্ব।

প্রথম পর্ব: বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে অটোমোবাইল কোম্পানির পিপিই, দাম দ্বিগুণ
দ্বিতীয় পর্ব: পিপিই-মাস্কের দেখা নেই, সাড়ে ৯ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে জাদিদ
তৃতীয় পর্ব: বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে ‘হরিলুট’: ১ অ্যাপের খরচ পৌনে ৫ কোটি টাকা!

অনুমোদনহীন মাস্ক ইআরপিপি এসআরএস এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশনস ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর করোনা মোকাবিলায় প্রকল্প কেএন৯৫ মাস্ক কোভিড মোকাবিলায় প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর