বিএনপি নেতাদের ঈদ নিজ নিজ অবস্থানে, সীমিত পরিসরে
৩১ জুলাই ২০২০ ১৬:৩৫
ঢাকা: ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এই আনন্দ নিকটজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে সেই আবহমান কাল থেকে ঢাকার মানুষ নাড়ির টানে গ্রামে ছোটে। আর ঢাকায় থেকে যাওয়া মানুষগুলো পরস্পরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, শুভেচ্ছা বিনিময়, স্বজনদের বাসায় ঢুঁ মারা, ঈদের দিনে বৈকালিক আড্ডা, ক্ষেত্র বিশেষ বহুদিনের পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে মিট টুগেদার!
এসব সৌজন্যতা বা সামাজিকতা দেখানোর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদের চেয়ে রাজনীতিবিদরা বেশি এগিয়ে থাকেন। কারণ, যেসব মানুষের সমর্থন, ভোট ও সহযোগিতায় তারা ‘নেতা’ হয়ে ওঠেন, তাদের প্রতি রাজনীতিকদের দায়বদ্ধতা একটু বেশিই বৈকি।
সে কারণেই, দেশের পরিস্থিতি যাই থাকুক না কেন, দলের নেতাকর্মী সমর্থক এবং নির্বাচনি এলাকার সাধারণ মানুষদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা, সামর্থ অনুযায়ী সহযোগিতা করা, পাশে দাঁড়ানো এবং খোঁজ-খবর নেওয়ার কাজটি ঈদ উপলক্ষে করতেই হয় নেতাদের। তাই শত প্রতিকূলতার মাঝেও নেতাদের ছুটে যেতে হয় গ্রামে। ছুটে যানও তারা। আর ঈদুল আজহায় এ কাজটি তাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, সাধ্যমতো কোরবানি করে এলাকার দরিদ্র মানুষের মধ্যে মাংস বিতরণের ব্যবস্থা না করলে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাটা অগ্রাহ্য থেকে যায়।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। বিশ্বমহামারি করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে সব হিসাব-নিকাশ। প্রতিটা মানুষ— হোক সে সাধারণ, অথবা অসাধারণ, নেতা অথবা সংগঠক, বড় অথবা ছোট, মহৎ অথবা ইতর, ক্ষমতাধর অথবা ক্ষমতাহীন— সবাই এখন আতঙ্কে। জীবন এবং জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হলেও উৎসব-আনন্দে শরিক হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। বরং যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই সীমিত পরিসরে ঈদ ও কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা সারতে হবে সবাইকে।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে যেখানে আছেন, সে সেখানেই পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করবেন। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত পরিসরে পশু কোরবানি, করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ-খবর নেওয়া এবং বন্যা দুর্গতদের মধ্যে সাধ্যমতো ঈদ উপহার পৌঁছে দিতে হবে।
অর্থাৎ যারা ঢাকায় আছেন, তারা ঢাকায় ঈদ করবেন। যারা নিজ নিজ এলাকায় আছেন তারা এলাকাতেই ঈদ পালন করবেন। খুব প্রয়োজন না হলে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ত্যাগ অথবা গ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা না হওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘একদিকে করোনা, আরেক দিকে বন্যা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঈদ বলে কিছু আছে? সীমাহীন আতঙ্ক আর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে মানুষের দিন কাটছে। পৃথিবী শান্ত না হওয়া পর্যন্ত ঈদের যে আনন্দ, সেটি উপভোগ করার সুযোগ নেই।’
খালেদা জিয়ার ঈদ
টানা চারটি ঈদ কারাগারে কাটানোর পর গত ঈদুল ফিতর গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ঈদ কাটিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ঈদুল আজহাও ফিরোজায় কাটাবেন তিনি। ঈদের দিন যথারীতি মেজ বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমার সঙ্গে দেখার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়ে প্রতি ঈদে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন দাদি খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ করার জন্য। লকডউনের কারণে ঈদুল ফিতরে তারা আসতে পারেননি। ঈদুল আজহায়ও আসার কোনো সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসউইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।
তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুলের ঈদ
টানা ১২ বছর ধরে প্রবাসে ঈদ করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবারও তিনি প্রবাসেই ঈদ করবেন। স্ত্রী-কন্যা, প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী, তাদের দুই মেয়ে, দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে লন্ডনে ঈদ করবেন তিনি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদ করবেন ঢাকার উত্তরার বাসায়। করোনা দুর্যোগ শুরুর পর থেকেই কোয়ারেনটাইনে আছেন তিনি। মাঝে মধ্যে গুলশান কার্যালয়ে ব্রিফিং করা ছাড়া বাসা থেকে বের হন না তিনি। ঈদটাও কোয়ারেনটাইনেই হবে তার। বিগত বছরগুলোতে নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁও এবং ঢাকার মধ্যে সমন্বয় করে ঈদ করেছেন তিনি। দলের চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান থাকলে ঈদের দিনটা ঢাকাতেই থেকেছেন মির্জা ফখরুল। ঈদের পরের দিন যেতেন ঠাকুরগাঁওয়ে। সেখানেই পশু কোরবানি করতেন। আর চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছা বিনিময় না থাকলে ঠাকুরগাঁয়েই ঈদ করতে তিনি। এবার ঈদ করবেন রাজধানীর উত্তরায়।
অন্য নেতাদের ঈদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাধারণত নির্বাচনি এলাকা কুমিল্লায় ঈদ করেন। বিশেষ করে ঈদুল আজহায় তিনি নিজ এলাকায় থাকেন। কিন্তু করোনা সংকটের কারণে এবার ঢাকাতেই ঈদ করবেন তিনি।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংকট শুরুর পর থেকেই ঢাকার বাসায় বন্দি হয়ে আছি। সুতরাং ঈদ ঢাকাতেই করতে হবে। তাছাড়া এই সংকটের মধ্যে ঈদানন্দ, ঈদোৎসব চিন্তা করার সুযোগ নেই। এখন বেঁচে থাকাটাই বড় কথা। বেঁচে থাকলে অনেক ঈদ আসবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঈদ করবেন ঢাকায়। তারা প্রত্যেকেই ঢাকার গুলশান-বনানী এলাকায় নিজ নিজ বাসায় আছেন।
তবে স্থীয় কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ঈদ করবেন নিজ জেলা চট্টগ্রামে। করোনা দুর্যোগ শুরুর আগে চট্টগ্রামে গিয়ে সেখানে আটকা পড়েছেন তারা। এবারের ঈদ সেখানেই উদযাপন করবেন তারা।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি তো সব সময় চট্টগ্রামে ঈদ করি। আর এবার চট্টগ্রামে আটকা পড়ে আছি। ঈদ চট্টগ্রামেই হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়। প্রবীণ এই রাজনীতিক গুলশানের নিজ বাসায় কোয়ারেনটাইনে আছেন। অন্যবার ঈদের দিন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও এবার করছেন না।
দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঈদ করবেন রাজধানীর আদাবরের বাসায়। করোনা সংকটে সবচেয়ে সক্রিয় এ নেতা টানা চার ঈদ নয়াপল্টন কার্যালয়ে কাটানোর পর গত ঈদুল ফিতরের আগে বাসায় ফিরে যান। সেখানেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেন তিনি। ঈদুল আজহাও পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন।
এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউছুফ, মো. শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ঈদ করবেন ঢাকায়।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ঈদের দিন সকাল ১১ টায় শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্টপ্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ আয়োজন কেবল স্থাীয় কমিটির সদস্যদের জন্য। অন্যদের সেখানে না যেতে অনুরোধ জানানো হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।