কোরবানির হাটে গরুর জন্য ক্রেতাদের হাহাকার
৩১ জুলাই ২০২০ ২১:৫৮
ঢাকা: রাজধানীর অধিকাংশ কোরবানির হাটে গরু না পেয়ে ক্রেতাদের মধ্যে হাহাকার অবস্থা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর অধিকাংশ বাজারে ক্রেতা থাকলেও কাঙ্ক্ষিত গরুর দেখা মিলছে না। এখনো বাজারে সামান্য কিছু গরু পাওয়া গেলেও সেগুলোর যে দাম চাওয়া হচ্ছে, তা ক্রেতাদের নাগারের বাইরে চলে গেছে। আবার বাজারে বেশকিছু বড় গরু রয়েছে, যেগুলোর দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা মিলছে না। ফলে বাজেটের মধ্যে কোরবানির গরু কিনতে ক্রেতারা এক বাজার থেকে আরেক বাজারে ছুটছেন। কিন্তু লাভ হচ্ছে না কিছুতেই।
শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর শাহজাহানপুর, কমলাপুর ও গাবতলী কোরবানির হাট সরেজমিন পরিদর্শনে এ চিত্র ফুটে উঠেছে। কোরবানির ঈদের ঠিক আগের দিন এমন চিত্রে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে রাজধানীবাসীর চোখেমুখে।
এদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর শাহাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি কোরবানির গরুর হাট সরেজমিনে অবস্থান করে দেখা গেছে, পুরো বাজার ফাঁকা। অর্থাৎ কলোনি মাঠের গরুর মূল প্যান্ডেলে কোনো গরু নেই। আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গরু দেখা গেলেও সেগুলো আকারে অনেক বড়, দাম দুই থেকে চার লাখ টাকা বা তারও বেশি। তবে এমন আকৃতির গরু কেনার মতো ক্রেতা না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না সেগুলো। আর হাতেগোনা দুয়েকটি মাঝারি ও ছোট আকারের গরুর দেখা মিললেও তার জন্য ক্রেতার সংখ্যা অস্বাভাবিকরকম বেশি হওয়ায় এসব গরুর মালিকরা চড়া দাম হাঁকছেন।
এদিকে, শুক্রবার শাহজাহানপুর গরুর বাজার গিয়ে দেখা গেছে, আগের দুই দিন অর্থাৎ বুধ ও বৃহস্পতিবার যেসব গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে সে সব গরু ৯০ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায়। আগের দুই দিন যে গরু ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, শুক্রবার সেসব গরুর বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। অর্থাৎ আগের দুই দিনের তুলনায় একই আকৃতির গরুর দাম ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে ক্রেতাদের উদ্বেগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়লেও হাসি ফুটেছে ব্যাপারীদের মুখে।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন রমিজ উদ্দিন ব্যাপারী। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ২৬টি গরু নিয়ে শাহজাহানপুর হাটে এসেছিলাম। দামই উঠছিল না। বুধ ও বৃহস্পতিবার যে ১৬টি গরু বিক্রি করেছি, সবগুলোতেই লস দিতে হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাকি ১০টি গরু আজ শুক্রবার বেশ লাভে বিক্রি করতে পেরেছি। প্রথম ১৬টি গরু লোকসানে বিক্রি করলেও শেষ ১০টি গরু বেশি লাভে বিক্রি করতে পারায় সব গরু বিক্রি শেষে আমার ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
অন্যদিকে ফরিদপুর কোতোযালি থানা থেকে শাহজাহানপুর হাটে একটি বড় গরু নিয়ে আসা ফরমান আলী গত তিন দিনেও তার গরুটি বিক্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম দুই দিন আমার ৮৬০ কেজি ওজনের গরুটি ৫ লাখ টাকা দাম চেয়েছিলাম। এখনো বিক্রি করতে পারিনি। আজ আরও ২ লাখ টাকা কমিয়ে ৩ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। তারপরও কেউ কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তিনি হতাশার সুরে বলেন, সখ করে বড় গরু পুষষলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ২ লাখ টাকার বেশি দাম দিয়ে কেউ গরু কিনতে চাচ্ছে না, তা যত বড় গরু-ই হোক না কেন!
এদিকে, শাহাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির কোবানির পশুর হাটে প্রচুর গরু উঠলেও গত দুই দিনে তার ৯৫ শতাংশেরও বেশি বিক্রি হয়ে গেছে। বাজারের ইজারাদার, গরুর ব্যাপারি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দামের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল। ক্রেতারা সাধারণত ১ লাখ টাকার কম দামের গরু কিনতে বেশি অগ্রহী। ফলে এই দামের গরুগুলো সব বিক্রি হয়ে গেলেও বেশি দামের কিছু গরু এখনো রয়ে গেছে। তবে সেগুলোর ক্রেতা নেই।
এ ব্যাপারে শাহজাহানপুর কোবানির হাটের একজন ইজারাদার ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজাম্মান বাবুল বলেন, আমাদের বাজারে পরিবেশ বেশ ভালো। ফলে সারাদেশ থেকেই প্রচুর গরু আসছিল। প্রথম দুই দিন দামও বেশ সস্তা থাকায় ছোট ও মাঝারি অকারের সব গরু বিক্রি হয়ে গেছে। এখন বাজারে হাতেগোনা কয়েকটি বড় গরু রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দিনে ৬/৭ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে বলে ধারণা করছি।
অন্যদিকে ১ নম্বর কাউন্টারে হাসিল সংগ্রহকারী মো. পিন্টু বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে গরুর দাম বাড়তে শুরু করলেও শুক্রবার সকাল থেকে তা নাগালের বাইরে চলে যায়। এখন বাজারে যে কয়েকটি গরু রয়েছে, সে তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি।
এদিকে, ক্রেতাদের কেউ কেউ সারাবাংলাকে বলেন, হাট শুরুর প্রথম দুই দিন গরু সস্তা পেলেও ইচ্ছা করেই তারা কেনেননি। তাদের ধারণা ছিল শেষের দিকে গিয়ে গরুর দাম আরও পড়ে যাবে। কিন্তু তাদের সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ফলে তারা এখন গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
গাবতলী পশুর হাটেও ক্রেতারা বলছিলেন, গরুর দাম একদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে নানা ব্যস্ততায় আগে যারা গরু কিনতে হাটে আসতে পারেননি, তারা কাপাল চাপড়াচ্ছেন। আর এই হাটেও বড় আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে। ফলে ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরু যারা এনেছিলেন, শেষ বেলায় এসে সেসব ব্যাপারীদের মুখে হাসি ফুটেছে। আর বড় আকৃতির গরুর ব্যাপারীরা মুখ শুকনো করেই বসেছিলেন গরুর ‘আকালে’র এই সময়েও গরু বিক্রি করতে না পেরে।
গাবতলী হাটে সায়েদাবাদ থেকে খোকন নামের এক ক্রেতা এসেছিলেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কেরাণীগঞ্জ, শনির আখড়া, ধোলাইখাল, শ্বশানঘাট, হজরতপুরসহ বিভিন্ন হাটে ঘুরে পছন্দসই গরু পাইনি। ওইসব বাজারে গরু নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে গাবতলী এসেছি। এখানে গরু কম দেখা যাচ্ছে। আর দামও আগের চেয়ে বেশি।’
কমলাপুর গরুর হাট গরুর সংকট গরুর হাট পশুর হাট শাহজাহানপুর কলোনি গরুর হাট