Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদের আনন্দ আয়োজন ‘তাদের’ জন্যও


১ আগস্ট ২০২০ ১৬:০১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর একটি করোনার আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন রোগী এবং স্বেচ্ছাসেবীরাও ঈদের আনন্দে শামিল হয়েছেন। বঞ্চিত হননি করোনার শুরু থেকেই যারা স্বেচ্ছাশ্রমে দাফন-দাহকাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন কিংবা আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারাও।

কারণ, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানা। এই থানায় একটি গরু ও একটি ছাগল কোরবানি দিয়ে রান্না করা গোশত পাঠানো হয়েছে নগরীর বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টারে এবং স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে। আর নগরীর হালিশহরে একদল তরুণের স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত করোনা আইসোলেশন সেন্টার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ঈদের আনন্দ-আয়োজন করেছে। করোনার কঠিন সময়ে রোগী এবং ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রাণবান রাখতে তারা নিজেরাই চারটি ছাগল কোরবানি দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোতোয়ালী থানা এলাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে অনেক পরিবার ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। করোনার শুরু থেকেই অনেক তরুণ-যুবক স্বেচ্ছাশ্রমে বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টারে আক্রান্তদের সেবা দিচ্ছেন, লাশ দাফন ও দাহ করছেন। আমরা কোতোয়ালী থানার পক্ষ থেকে এবার তাদের নিয়েই ঈদুল আজহা উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। স্বজন হারানো মানুষগুলো মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছি। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে এই ম্যাসেজটা দিয়েছি যে, আমরাও আপনাদের সঙ্গে আছি।’

মৃতের স্বজনদের পাশাপাশি আল মানাহিল, গাউছিয়া কমিটি, করোনা আইসোলেশন সেন্টারে কোতোয়ালী থানা থেকে রান্না করা গোশত পাঠানো হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নগরীর হালিশহরে প্রিন্স অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে গড়ে তোলা করোনা আইসোলেশন সেন্টারে একদিকে রোগীদের নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা, অন্যদিকে সীমিত পরিসরে চলছে ঈদ আয়োজনও।

করোনা আইসোলেশন সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক নুরুল আজিম রনি সারাবাংলাকে জানান, শনিবার (১ আগস্ট) করোনায় আক্রান্ত ১৭ জন এবং উপসর্গ নিয়ে সাতজন ভর্তি আছেন। চিকিৎসক-নার্স ছাড়াও স্বেচ্ছাশ্রমে তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আরও ১৭ জন। শুক্রবার ৮ জন এবং বৃহস্পতিবার চারজনকে সুস্থ করে এই আইসোলেশন সেন্টার থেকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

‘আমাদের যে ১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী সেবা দিচ্ছেন তারা কিন্তু একেবারেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। গত দুইমাসে একবারের জন্যও বাড়ি যায়নি এমন আছেন ১২ জন। ৫ জন ছিলেন কোভিড পজেটিভ। পরে সুস্থ হয়েছেন। রোগী এবং স্বেচ্ছাসেবী ভাইদের কথা চিন্তা করে আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে আমরা চারটি ছাগল কোরবানি দিয়েছি। কোরবানির গোশত দিয়ে দুপুরে ভালো খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। রাতেও আমাদের ছোট আনন্দ আয়োজন আছে। কঠিন সময়ে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন, তাদের পাশেও থাকতে হবে’, বলেন নুরুল আজিম রনি।

করোনা আইসোলেশন সেন্টারের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নিজেরাই কোরবানি দিয়েছি। আবার কোতোয়ালী থানা থেকে পাঠানো হয়েছে ২০ কেজি রান্না করা গরুর গোশত। আমরা কোতোয়ালী থানার ইতিবাচক মনোভাবকে সাধুবাদ জানাই। আমরা মনে করি, যেসব রোগী আমাদের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন কিংবা যারা সেন্টার পরিচালনায় আছেন ও স্বেচ্ছাশ্রমে সেবা দিচ্ছেন আমরা সবাই একই পরিবারের স্বজন। ঈদের আনন্দও তাই আমরা ভাগাভাগি করে নিয়েছি।’

চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের পোর্ট কানেকটিং সড়কে প্রিন্স অব চিটাগং নামে একটি কমিউনিটি সেন্টারে গড়ে তোলা ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারটির যাত্রা শুরু হয় গত ১৩ জুন। করোনার সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রামে যখন চিকিৎসা নিয়ে হাহাকার শুরু হয় তখন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সংস্কৃতিকর্মী মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন, আইনজীবী জিনাত সোহানা চৌধুরী, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিসহ একদল তরুণ মিলে এটি গড়ে তোলেন।

করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সাজ্জাত হোসেন।

আইসোলেশন সেন্টার চিকিৎসাধীন রোগী স্বেচ্ছাসেবী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর