Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্যারের করোনা হলে সেটি আমার জন্য হতো সুইসাইডাল— মোকাব্বির খান


৪ আগস্ট ২০২০ ২০:২৪

মোকাব্বির খান। সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-উসমানী নগর উপজেলা) সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের প্রথম ও একমাত্র সংসদ সদস্য। অবশ্য সবাই তাকে ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্য হিসেবেই মনে করেন। কিন্তু মোকাব্বির খানের সাফ কথা, তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্য নন, গণফোরামের সংসদ সদস্য। তিনিই একমাত্র প্রার্থী, যিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং নির্বাচনি পোস্টার দলীয় প্রধান হিসেবে ড. কামাল হোসেনের ছবি ব্যবহার করেছেন। গণফোরামের ২৬ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি গণফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশের ৩৭ দিনের মাথায় গত ১৫ মে কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে মোকাব্বির খানের। এর মাত্র সাতদিন আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান এবং গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তার বাসায় বৈঠক করেন মোকাব্বির খান। সঙ্গত কারণেই তার মধ্যে এই ভয় কাজ করছিল যে, ড. কামাল হোসেনেরও কোভিড-১৯ পজিটিভ আসবে। আর সেটা হলে, বিষয়টি তার (মোকাব্বির খান) জন্য হতো সুইসাইডাল।

করোনা আক্রান্ত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসারত অবস্থায় দলীয় প্রধান ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে দুঃচিন্তা, করোনা জয় করে নিজের নির্বাচনি এলাকায় ফিরে গিয়ে ত্রাণ তৎপরতা, গণফোরামের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সর্বোপরি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় অর্জন এবং নির্বাচনের পর দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন সে ব্যাপারে সারাবাংলাকে বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোকাব্বির খান। মোবাইল ফোনে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আসাদ জামান। নিচে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

সারাবাংলা: এখন কেমন আছেন?

মোকাব্বির খান: করোনা জয় করে ফিরে এসেছি। রোগমুক্ত হয়েছি। তবে শরীরটা দুর্বল।

সারাবাংলা: কোথায় আছেন?

মোকাব্বির খান: নির্বাচনি এলাকা— সিলেটেই আছি।

সারাবাংলা: আপনার নির্বাচনি এলাকার বন্যা পরিস্থিতি কেমন?

মোকাব্বির খান: বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত।

সারাবাংলা: আপনার নির্বাচনি এলাকায় করোনার কী অবস্থা?

মোকাব্বির খান: এখানের অবস্থা খুব খারাপ। যে টেস্ট করায়, সে-ই করোনা পজিটিভ। টেস্ট করলেই করোনা ধরা পড়ে। আমাদের টিএনও, এসিল্যান্ড কোভিড-১৯ পজিটিভ। আর আমি তো শুরুর দিকেই আক্রান্ত হয়ে গেলাম।

সারাবাংলা: এই করোনা এবং বন্যার মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা কেমন চলছে?

মোকাব্বির খান: সিএমএইচ’র চিকিৎসকরা আমাকে যেদিন সুস্থতার ছাড়পত্র দিল, সেদিনই আমি সিলেট চলে আসছি। এবং এর পরের দিনই এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করি। প্রথম দিকে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকার ত্রাণ দিয়েছি। এরপর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে আরও সাড়ে চার লাখ টাকা চেয়ে এনে ত্রাণের কাজে ব্যয় করেছি। এখনও ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

সারাবাংলা: সরকারের তরফ থেকে ত্রাণ বরাদ্দ পাননি?

মোকাব্বির খান: সংসদ সদস্যদের জন্য সরকারের তরফ থেকে কোনো বরাদ্দ নেই। সরকার অন্য মাধ্যমে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনা অপ্রতুল। আরও ত্রাণ দরকার।

সারাবাংলা: আপনি যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন, সেখানে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?

মোকাব্বির খান: মোটেই না। আর আমি তো সবার জন্যই কাজ করছি। কারণ, নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো সংসদ সদস্য নির্দিষ্ট কোনো দলের থাকে না। সে সবার এমপি। আমার কাছে প্রতিদিন কত মানুষ আসে। আমি তো কারও কাছে জিজ্ঞেস করি না, আপনি কোন দল করেন। আমি সবাইকে সাধ্যমতো সাহায্য করি। আমার কাছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি— সবাই সমান।

সারাবাংলা: আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন?

মোকাব্বির খান: আমাকে সবাই সহযোগিতা করছে। সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে বলেছে, ‘আমরা এমপি সাহেবকে দেড় বছর পর্যবেক্ষণ করেছি। তিনি নির্দিষ্ট কোনো দলের হয়ে কাজ করছেন না। সবার জন্য কাজ করছেন। এখন থেকে আমরা তার সবধরনের কাজে সমর্থন দেব, সহযোগিতা করব।’

সারাবাংলা: এতে করে বিএনপিতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি?

মোকাব্বির খান: বিএনপিতে কেন প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে? আমি তো তাদের জন্যও কাজ করছি।

সারাবাংলা: আপনি তো জোট প্রার্থী ছিলেন। বিএনপি আপনাকে ভোট দিয়েছে।

মোকাব্বির খান: আপনারা ভুল করছেন। আমি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপির প্রার্থী ছিলাম না। আমি গণফোরামের প্রার্থী ছিলাম। আমার প্রতীক ছিল উদীয়মান সূর্য। আমার পোস্টারে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ছবি ব্যাবহার করেছি। অন্য কোনো দলের প্রতীক বা দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করিনি। আমি গণফোরামের প্রার্থী ছিলাম। বিএনপি আমাকে সমর্থন দিয়েছিল মাত্র।

সারাবাংলা: ড. কামাল হোসেন কেমন আছেন?

মোকাব্বির খান: স্যার ভালো আছেন। উনার সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয়েছে ৮ মে। আমি ঢাকায় যাব শোনার পর উনি বললেন, ‘মোকাব্বির, আপনি সরাসরি আমার বাসায় চলে আসবেন।’ আমি এয়ারপোর্টে নেমে সোজা স্যারের ওখানে চলে গেলাম। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াও ছিলেন। আমরা মাস্ক পরে দশ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে স্যারের সাথে কথা বললাম। এর সাত দিন পর আমার করোনা পজিটিভ আসে।

সারাবাংলা: তারপর?

মোকাব্বির খান: আমি তো সিএমএইচে ভর্তি হলাম। আমার করোনা চিকিৎসা চলতে থাকল। কিন্তু সব সময় ভেতরে একটা ভয় কাজ করেছে। স্যারের যে বয়স, এখন যদি স্যারের করোনা পজিটিভ আসে, তাহলে তো বিপদ। উনারের করোনা পজিটিভ হলে সবাই আমাকে দায়ী করবে। আর এটাই তো স্বাভাবিক। যেহেতু উনার সঙ্গে দেখা হওয়ার সাতদিন পর আমার পজিটিভ আসছে! স্যারের যদি ওই সময় করোনা পজিটিভ আসত, তাহলে সেটা আমার জন্য সুইসাইডাল হতো।

সারাবাংলা: দলের কী খবর?

মোকাব্বির খান: করোনার কারণে সব কিছু স্থবির অবস্থায় আছে। করোনার আগে পুরোদমে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলেছে। আমার বেশ কয়েকটি জেলা সফর করেছি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো রিভিউ করেছি। কাজ সব ঠিকঠাক মতো এগোচ্ছিল।

সারাবাংলা: দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব, কোন্দলের কথা শোনা যায়!

মোকাব্বির খান: হ্যাঁ, সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে একটু মনোমালিন্য হয়েছিল। সে কারণেই তো কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আসলে এসব দ্বন্দ্ব- কোন্দল সব দলেই আছে। কারণ, কোনো সিদ্ধান্ত পক্ষে গেলে সেটা সবাই বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করে। বিপক্ষে গেলেই অনেক প্রশ্ন ওঠে। এটা একেবারেই স্বাভাবিক। তবে স্যারের (ড. কামাল হোসেন) নেতৃত্বে দল ঠিক পথেই এগোচ্ছে।

সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ

মোকাব্বির খান: ধন্যবাদ সারাবাংলাকেও

উদীয়মান সূর্য করোনা পজিটিভ গণফোরাম ড. কামাল হোসেন মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য সুইসাইডাল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর