শুদ্ধি অভিযান চলমান, দলীয় পরিচয় থাকলেও কেউ ছাড় পাবে না: কাদের
৪ আগস্ট ২০২০ ২০:১৮
ঢাকা: শুদ্ধি অভিযান চলমান রয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি-অপরাধে জড়িতদের দলীয় পরিচয় থাকলেও তারা কেউ ছাড় পাবে না।
তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়মসহ অন্যান্য খাতের অনিয়মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান জনমনে নতুন করে প্রত্যাশার আলো জ্বালিয়েছে। দলীয় পরিচয় থাকলেও অনিয়ম করে কেউ ছাড় পাবে না— এ কথা আজ স্পষ্ট। সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) বিকেলে সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে এই সময়ে’ শীর্ষক আলোচনায় যুক্ত হয়েছিলেন সরকারের এই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
আলোচনায় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্ব আজ কঠিন সময় পার করছে। করোনা মহামারি স্থবির করে দিয়েছে প্রাণোচ্ছ্বল পৃথিবীকে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অসীম সাহসিকতায় মোকাবিলা করছে এ মহামারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহান-মানবিক নেতৃত্বের কারণেই আমরা এই মহামারি মোকাবিলার সাহস পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় স্রষ্টার অপার রহমতে ভালো অবস্থানে আছি। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার সরকার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের সুরক্ষায় দিন-রাত কাজ করছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়মসহ অন্যান্য খাতের অনিয়মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান জনমনে নতুন করে প্রত্যাশার আলো জ্বালিয়েছে। দলীয় পরিচয় থাকলেও অনিয়ম করে কেউ ছাড় পাবে না— এ কথা আজ স্পষ্ট।
ওবায়দুল কাদের বলেন, অর্থনীতির ক্ষতি পুষিয়ে জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে শেখ হাসিনা সরকার নিয়েছে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। এই দুর্যোগে প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি জোগাচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রয় আদেশ বাতিলের পেক্ষাপটে নিজেই বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মাঝে ক্রয় আদেশ আসতে শুরু করেছে। অর্থনীতি আকস্মিক স্থবিরতা কাটিয়ে পুরনো ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে।
প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকুন। শেখ হাসিনা সরকারের ইতিবাচক অর্জন ও প্রচার করুন। প্রবাসে আপনাদের মধ্যে যারা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছেন, তাদের দায়িত্ব একটু বেশি। যারা সমস্যায় আছেন তাদের পাশে দাঁড়ান। আমি জানি আপনারা করছেন। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সেবা প্রদানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসগুলোকে সম্প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দূতাবাসগুলোর সেবার মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে আপনারা প্রয়োজনে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নজরে আনতে পারেন। প্রয়োজনে আমাকে জানাতে পারেন, আমি নেত্রীকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) জানাতে পারব।
বিএনপি ও দলটির নেতাদের সমালোচনা করে কাদের বলেন, একটি মতলবি মহল দেশ-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে দেশের ইমেজ নষ্ট করছে। লাখ লাখ প্রবাসীর অবস্থানকে নড়বড়ে করছে। সম্প্রতি ইতালি বিএনপির এক নেতার বক্তব্যে ইতালি প্রবাসীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিএনপি নামক দলটি সরকারের কোনো ইতিবাচক প্রয়াস দেখতে পায় না। তারা সমালোচনা আর মিথ্যাচারের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে। দিনের আলোতে দেখতে পায় রাতের অন্ধকার। প্রেস ব্রিফিং আর নেতিবাচকতার কাদামাটিতে আটকে আছে তাদের রাজনীতি।
শোকের মাস আগস্ট চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বছর চলছে। অন্যদিকে এখন আগস্ট মাস, শোকের মাস। আগস্ট মানেই হারানোর বেদনা, হায়েনাদের অট্টহাসি আর ষড়ন্ত্রের গন্ধ। যে বুলেট ১৫ আগস্ট রাতের শেষ প্রহরে হানা দিয়েছিল যে বুলেট, সে বুলেট ২১ আগস্ট আরও নির্মম হয়ে হানা দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে। ১৫ আগস্ট প্রাইম টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধু, আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রাইম টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্রের কুশীলবরা শুধু রূপ পরিবর্তন করে, হারায় না। ষড়যন্ত্রকারীদের অব্যাহত অপচেষ্টা আজও চলমান। আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনারা বিদেশের মাটিতে নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয়গুলো মানবিক-উদারতা নিয়ে এড়িয়ে চলুন। গড়ে তুলুন সুদৃঢ় ঐক্য। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন। আপনারা শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া মানে প্রবাসে বাংলাদেশ শক্তিশালী হওয়া।