‘শেখ কামাল বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার ভিত্তি গড়েছিলেন’
৬ আগস্ট ২০২০ ০২:১১
ঢাকা: শহিদ শেখ কামালের হাত ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার ভিত্তি তৈরি হয় বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। বুধবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এই মত প্রকাশ করেন তারা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, তরুণ রাজনীতিক শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তারুণ্যের জেগে ওঠার নাম শেখ কামাল’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই বিশেষ ওয়েবিনারে ৫ আগস্ট রাত ৮.৩০ মিনিটে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
আলোচক হিসেবে অনলাইন মিটিং প্ল্যাটফর্ম জুম এর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক হারুন-উর-রশিদ, সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মণ্ডল এবং আবাহনীর প্রথম অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার এবং সিনিয়র ফটো সাংবাদিক পাভেল রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শহীদ শেখ কামালকে স্মৃতিচারণ করে নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, উনি (শেখ কামাল) শেখ মুজিবের সন্তান এমন কোন দাম্ভিকতা ছিল না। ছিলেন সাধারণ মানুষের মতই। জাতির একটি সংস্কৃতির যা যা উপাদান দরকার ছিল তার ভিত্তি কিন্তু শেখ কামাল গড়ে দিয়েছিলেন। আজ তা তরুণ প্রজন্মের কাছে লালিত হচ্ছে।
নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ বলেন, আমরা যখন একসাথে ছিলাম তখন আমাদের মাঝে সম্পর্ক ছিল অন্য রকম। স্বাধীনতার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক চর্চা দেখার মত ছিল। শুধু রাজনীতিতেও না শেখ কামালের বিচরণ ছিল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও।
তিনি বলেন, ‘সেতার বাজানোতে শেখ কামাল ছিলেন দক্ষ। আমরা একসাথে আড্ডা দিতাম। অনেক ভাল গান করতো। আমরা অবসরে তার গান শুনতাম। ১৯৭৫ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমরা ডাকসুর উদ্যোগে পালন করি। তখন আমরা ছাত্রলীগ ও ডাকসু একসাথে পালন করি। শেখ কামাল আমাদের সাথে ছিলেন। তখন আমরা নতুন নতুন গান করি’।
শেখ কামালের প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রথম অফিসিয়াল আলোকচিত্রী পাভেল রহমান বলেন, ‘১৯৭৪ সালে কামাল ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে, ৩২ নম্বরের বাড়িতে। আমি বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলছিলাম নীচ তলায়, খেলাঘরের বাচ্চারা বঙ্গবন্ধুর গলায় লাল স্কার্ফ পরিয়ে দিচ্ছিলেন। সেসময় বারান্দায় কামাল ভাইকে দেখলাম। আমি সালাম দিয়েই সামনে যেতেই আমাকে তিনি কেক হাতে দিলেন। দিয়ে বললেন ‘কেমন আছো?’। আমি এতো চমকে উঠেছি! যে আমার সাথে উনার তখনো পরিচয় নেই, কিন্তু উনি এভাবে বললেন। তারপর তিনি বললেন- তুমি কোথায় কাজ করো? আমি বলতেই তিনি বললেন, ‘তুমি কি আমাদের আবাহনীর ছবি তুলে দিবে? তখন তিনি আমাকে আবাহনী ক্লাব চিনিয়ে দিলেন।’
পাভেল রহমান বলেন, ‘এরপর আমরা ক্লাব থেকে গণভবনে আসি বঙ্গবন্ধুর কাছে। আমি একে একে অনেক ছবি তোলার পর হঠাৎ করেই কামাল ভাই আমাকে ডাক দিলেন- ‘পাভেল, পাভেল! আমিও ভাবছিলাম কি জানি কি ছবি তুলবেন হয়তো। কাছে যেতেই উনি আমাকে পেছন থেকে একটু ধাক্কা দিয়েই বঙ্গবন্ধুর দিকে আগিয়ে দিলেন। আমি বুঝে উঠার আগেই এর মধ্যেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, ‘আব্বা, আব্বা! ও হচ্ছে আমাদের আবাহনীর ফটোগ্রাফার।’ বলতেই আমি তো অবাক! আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবেন, আমার মধ্যে কি আছে পরিচয় করিয়ে দেবার মত! বঙ্গবন্ধু রিল্যাক্স করে বসেছিলেন, যখন শুনেছেন আবাহনীর ফটোগ্রাফার তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। এরপর কামাল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন- ‘তোদের আবাহনীতে আবার ফটোগ্রাফার ও আছে?’। কামাল ভাই বললেন, ‘হ্যাঁ আব্বা আছে, ওর নাম পাভেল।’ এরপরে তো কামাল ভাইয়ের সাথে আরও অনেকবার দেখা হয়েছে, সবগুলোই স্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে। কামাল ভাইয়ের যে দিকটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তা হলো উনার মনটা একদমই কিশোর, এতো কিশোর মন তার। এতো সবসময় উনার চঞ্চলতা উনার মাঝে, মনে হতো আমরাই যেনো বুড়ো হয়ে যাচ্ছি!’
বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মণ্ডল বলেন, ‘আমার বয়স অনুসারে কামাল ভাইকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি তবে সাংবাদিক হিসেবে শুধু পত্র-পত্রিকা পর্যালোচনা করে বা একটু অনুসন্ধানী চোখ নিয়ে দেখে, মানুষের সাথে কথা বলেই আমাকে শেখ কামাল সম্বন্ধে কথা বলতে হবে। আমি একাত্তরেই ফিরে যেতে চাচ্ছিলাম। কারণ ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ নামে যে দলটা হলো, সেই দলের ভিতর কেন যেনো জুনিয়র-সিনিয়রের ভেতরে একটা অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলো। সেই অন্তর্দন্দ্ব সুরাহা করার জন্য শেখ কামাল সেখান উপস্থিত, তখন তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন- ‘ঠিক আছে, আমরা সবাই এখানে এসেছি। আগে দেশ স্বাধীন করতে হবে। দেশ স্বাধীনের পরে আমরা একটা দল করবো, আমরা একটা ক্লাব করবো, সেখানেই ফুটবলের নতুন কিছু করবো। এই যে নতুন কিছু করার চিন্তা। ২৬ বছর ১০ দিনের জীবন যার, তার জীবনের প্রতিটি বাঁকেই বোধ হয়। বাঁক পরিবর্তনে নতুন কিছু সাক্ষ্য রেখে গেছেন, নতুন কিছু করার।’
তিনি বলেন, ‘শেখ কামালকে দেশের তরুণ সমাজ বেশি মনে রাখবে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে, ক্রীড়াবিদ হিসেবে। ক্রীড়াবিদ শেখ কামালকে ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও শেখ কামালের বন্ধু হারুনুর রশীদ বলেন, ‘কামাল ২৬ বছরের এক তরুণ। ২৬ বছরেই কামাল যে প্রতিভার সাক্ষর রেখে গেছে আমাদের কাছে, এই বয়সী কিংবা এর চেয়ে বেশি বয়সের কারো মাঝে এমন প্রতিভার দেখা পাই না।