নদী এবং জলাশয়ের জায়গা বিক্রি বা লিজ দেওয়া যাবে না: আপিল বিভাগ
৬ আগস্ট ২০২০ ০২:২৭
ঢাকা: কোনো নদী, জলাশয়ের জায়গা বিক্রি করা যাবে না বা লিজ দেওয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আদালত বলেছেন, সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। তবে নদী দখল ফৌজদারি অপরাধ, নদী দখলকারী ব্যক্তিকে নির্বাচন এবং ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় সংশোধন করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
এই তিনটি বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাকে আদালতের অভিমত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালত বলেছেন, আইন প্রণয়ন করার সম্পূর্ণ এখতিয়ার জাতীয় সংসদের। আদালত সংসদকে আইন করতে নির্দেশ দিতে পারে না। তবে কোনো আইন সংবিধান পরিপন্থি হলে তা বাতিল করতে পারে। কোনো আইন সংশোধনের জন্য আদালত মতামত দিতে পারে।
তুরাগ নদের তীরের অবৈধ দখল ও নদী ভরাট বন্ধে সম্প্রতি প্রকাশিত আপিল বিভাগের রায়ে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করলেও সম্প্রতি এই রায় প্রকাশিত হয়েছে।
রায়ে আরও বলা হয়, কোনো জরিপের সময় প্রথমেই সিএস ম্যাপে জরিপ (সার্ভে) করতে হবে। পরে আরএস ম্যাপে জরিপ করতে হবে।
গাজীপুরের তুরাগ নদের তীরের অবৈধ দখল ও নদী ভরাট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রিট আবেদন করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। এ রিট আবেদনে একইবছরের ৯ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পরবর্তীতে তুরাগ দখল করা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়।
এই তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতবছর ৩ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় একই বছরের পহেলা জুলাই। রায়ে নদী দখলকারীকে দেশের ইউনিয়ন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। রায়ে দেশের কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাবারও অযোগ্য ঘোষণাসহ ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে ৬ মাসের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রায়ে দেশের সকল নদীকে জীবন্তস্বত্ত্বা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে তুরাগ নদের তীর থেকে নিশাত জুট মিলস সহ দখলকারীদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে নিশাত জুট মিলস কর্তৃপক্ষ। তাদের আপিল নিষ্পত্তি করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন আপিল বিভাগ। যার পূর্ণাঙ্গ রায় সম্প্রতি প্রকাশ হয়।