৫ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ২৫%, পরামর্শক ব্যয় বাড়ছে ৮০ কোটি
৬ আগস্ট ২০২০ ০৮:২২
ঢাকা: প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের ভূমিকম্প ঝুঁকি কমানো। পাঁচ বছরের প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম— ১৬ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি শেষ করতে আরও দুই বছর সময় চাওয়া হয়েছে সংশোধনী প্রস্তাবে। ৪২৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্পটিতে ব্যয়ও বাড়ছে ১০৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বর্ধিত এই ব্যয়ের ৮০ কোটি টাকারও বেশি যাচ্ছে পরামর্শক খাতে!
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘আরবান রেজিলিয়েন্ট প্রজেক্ট (ইউআরপি) রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব থেকে এ চিত্র দেখা গেছে। মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করেছে, তা প্রক্রিয়াকরণও শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্খনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে সংশোধনী উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ভূমিকম্পের ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষায় প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। কিন্তু এখন প্রকল্প ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, আরবান রেজিলিয়েন্ট ইউনিট ভবনের ডিজাইন পরিবর্তন, সরকারি তহবিলের অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয়ের হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটির সংশোধন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন পরামর্শক খাতে মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২৭ কোটি ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এখন ৮০ কোটি ৭৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বাড়িয়ে এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০৮ কোটি ৪৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ, অর্থাৎ গত জুন মাস পর্যন্ত পরামর্শকের জন্য ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির সংশোধনীর প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১৫ মাত অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এখন একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ‘আরবান রেজিলিয়েন্ট প্রজেক্ট (ইউআরপি) রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল অনুমেদিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪২৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ৪০৮ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ১০৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ২৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
এদিকে, মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত ব্যয়ের মাত্র ১৬ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মত্র ২৫ শতাংশ।
অনুমোদিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী এ প্রকল্পটি চলতি বছরের জুন মাসে সমাপ্তর জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু জনবল ও পরামর্শক প্রাতষ্ঠান নিয়োগে দেরি হওয়ার কারণে যথাসময়ে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক ঋণ চুক্তির সময়সীমা বাড়িয়েছে। ফলে এখন নতুন করে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল। এজন্য ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমানো এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। সংস্থাটির গ্লোবাল ফ্যাসিলিটি ফর ডিজাস্টার রিডাকশন অ্যান্ড রিকভারি (জিএফডিআরআর) থেকে আর্থকোয়াক অ্যান্ড মেগা সিটিস ইনিশিয়েটিভ (ইএমআই) নামক একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি দুই ফেজে বাংলাদেশ আরবান আর্থকোয়াক রেজিলিয়েন্ট প্রজেক্ট শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এরই মধ্যে প্রথম ফেজের কাজ শেষ, দ্বিতীয় ফেজের কাজ চলমান।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, সিলেট সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, রাজউক এবং পরিকল্পনা কমিশন সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি। এটি একটি আমব্রেলা প্রকল্প, যা চারটি কম্পোনেন্টে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের বি ও সি কম্পোনেন্ট বাস্তবায়ন করছে রাজউক। প্রকল্প এলাকা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, সাভার পৌরসভা, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়বে। তাই প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।