Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতারণার অভিযোগ: জনসেবা ক্লিনিকে সিভিল সার্জন, কাগজপত্র তলব


৭ আগস্ট ২০২০ ১৭:০০

ঠাকুরগাঁও: জেলার ‘জনসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’র মালিক কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি সিজার পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়ার নামে ৪ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সারাবাংলায় এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর জেলা সিভিল সার্জন ওই ক্লিনিক পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের কিসামত তেওয়ারীগাঁও মুন্সিপাড়া নামক এলাকায় পাকা সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে ‘জনসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টক সেন্টার’। কথিত এই ক্লিনিকের নেই সরকারি অনুমোদন বা লাইসেন্স, নিজস্ব ভবন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, নার্সসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগে জানা যায় করোনাকালীন সময়ে গত ৭ মে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার কিসামত হাজারী গ্রামের প্রতিমা রাণী (৩৬) সন্তানসম্ভাবা অবস্থায় ওই ক্লিনিকে ভর্তি হন। চিকিৎক না থাকায় ৮ মে শহরের পপুলার ক্লিনিকে ভর্তি হন। সেখানে রাতেই ডা. হামিদুর রহমান তার সিজারিয়ান অপারেশন করেন। কিন্তু রোগীর শরীরে জন্ডিসসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ৯ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত ১৫দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলে প্রতারক কৃঞ্চ চন্দ্র রায় দালালের মাধ্যমে কৌশলে তার জনসেবা ক্লিনিকে এনে পুনরায় ভর্তি করায়।

এ ব্যাপারে রোগীর স্বজনদের সাথে ২ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তি হয়। চিকিৎসা শেষে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিল হাকিয়ে দেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাক বিতণ্ডা দেখা দিলে প্রতিবেশি রহিম, রাজ্জাকুল, রফিকুল, আইনুল ও মহিলা ইউপি সদস্যসহ অনেকেই এগিয়ে আসেন। পরে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে রোগী রিলিজ নিতে হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রতিমা রাণীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাথে ২ লাখ টাকার কথা হয়। কিন্তু রিলিজের সময় ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। শেষে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে রিলিজ নিতে হয়েছে।’

জনসেবা ক্লিনিকের পরিচালক কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রত্যেকটা ব্যবসায় দালাল আছে। যে রোগীকে নিয়ে কথা হচ্ছে, সে তো বেঁচে আছে। তারপরও সেসব নিয়ে কথা হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা নিয়ে ১৩ জন রোগী ভালো হয়েছেন। অন্য কারও তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশন ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান ডন চৌধুরী বলেন, ‘জনসেবা ক্লিনিক আমাদের সমিতির সদস্য না। সে কারণে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’

অনুমোদন ছাড়াই ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার

সভাপতি জুলফিকার আলী ভূট্টো বলেন, ‘ক্লিনিকে অপারেশনসহ যে সমস্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়, তার জন্য নির্ধারিত চার্ট আছে। সেই রেড চার্ট প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে ঝুলানো থাকার কথা। একটা সিজার করতে সর্বোচ্চ ৮-১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়।’

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘যখন কোনো ক্লিনিকের সব প্রকার শর্ত পূরণ থাকে না তখন তাদের কাছে কাগজপত্র চেয়ে একটা সময় দেওয়া হয়। তারপর কোন ক্লিনিকের মালিক যদি শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয় তখন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ওই ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে কর্তপক্ষকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দিতে না পারে তবে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জনসেবা ক্লিনিক সিজার পরবর্তী চিকিৎসা