বঙ্গমাতা সৎ-নির্লোভ চরিত্রের মহিয়সী নারীর প্রতীক: এস এম কামাল
৯ আগস্ট ২০২০ ১২:৫৭
ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেছেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন বলেই টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সততা ও নির্লোভ চরিত্রের মহিয়সী নারীর প্রতীক। তার মতো সৎ একজন নারী বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন বিধায় বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রেরণা পেয়েছিলেন।
শনিবার (৮ আগস্ট) জয়পুরহাট জেলা পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণ সভা এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার নেপথ্য রাজনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এস এম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘যার অসামান্য অবদান, সাহসিকতা, ত্যাগ ও প্রেরণা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে শক্তি জুগিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন সেই মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব। বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন বিধায় টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা তিনি হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বেগম মুজিব তৎকালীন ছাত্রনেতাদের সাহস, বুদ্ধি থেকে শুরু করে অর্থ সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তার ভূমিকাও ছিল প্রশংসিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেগম মুজিব ছিলেন সততা ও নির্লোভ চরিত্রের মূর্ত প্রতীক। তার মতো সৎ একজন নারী বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন বিধায় বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রেরণা পেয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘ছয় দফা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি নিয়ে যখন কথা হচ্ছিল, তখন বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা ও সাহসী পদক্ষেপের কারণে যারা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হাটেন। বঙ্গমাতার এই দৃঢ়চেতা সাহস ও দূরদর্শী বুদ্ধিমত্তার কারণেই পরে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন।’
বেগম মুজিব একদিকে সন্তানদের বঙ্গবন্ধু এবং তার আদর্শে শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মীদের সঠিক ধারায় পরিচালিত করার লক্ষ্যে নেপথ্যে সংগ্রাম করেছেন বলে উল্লেখ করেন এস এম কামাল।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয় সেদিন তার পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করেছিলেন। কারণ তারা জানতেন, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের যে কেউ বেঁচে থাকলে বাংলার মানুষ তার নেতৃত্ব মেনে নেবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। তাই সেদিন ঘাতকেরা জাতির পিতার পরিবারের সকল সদস্যদের হত্যা করেছিলেন। যাতে তার পরিবারের কেউ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে কাজ করতে না পারে।’
‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সেদিন বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে। কিš‘ বিদেশে থাকার কারণে সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা, মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। আজ আমরা আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে সাহসিকতার সঙ্গে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলকে কাজ করতে হবে। আজকের এই দিনে আমাদের শপথ হবে, জননেত্রী শেখ হাসিনা যেমন দিনরাত পরিশ্রম করে সকল সংকটকে মোকাবিলা করে দুর্যোগ, বন্যা, সর্বোপরি করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারী মোকাবিলা করে দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন। মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের উচিত হবে তার নির্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। আমাদের অঙ্গীকার হবে, দুর্নীতিবাজ, অসৎ ব্যক্তিদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে, দলকে রক্ষা করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা।’
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসা মুজিবের জন্মবার্ষিকীতে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে জাতির পিতাসহ যারা ১৫ আগস্ট শহীদ হয়েছিলেন তাদের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
জয়পুরহাট জেলা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজম আলীর সভাপতিত্বে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন হিমু। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুল আলম দুদু এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী।