আমাদের ডাটা সিকিউরিটি অ্যাক্ট করতে হবে: দেবপ্রিয়
৯ আগস্ট ২০২০ ১৭:১২
ঢাকা: সঠিক তথ্য-উপাত্ত পেতে হলে আমাদের ডাটা সিকিউরিটি অ্যাক্ট করতে হবে। যেন জনগণ সব ধরনের তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারে। কারণ মিডিয়া হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ আর তথ্য উপাত্ত হলো রাষ্ট্রের পঞ্চম স্তম্ভ। তথ্য উপাত্তের সঠিকতা নিরূপণ করতে হবে। সে জন্য আমাদের সমস্ত দলীয় চিন্তার বাইরে থেকে একটা পেশাদারি মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
শনিবার (৮ আগস্ট) ‘আমরা কেমন আছি’ শীর্ষক সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সারাবাংলা ডটনেটের সরাসরি আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ নামে এক ভার্চুয়াল সংলাপে অংশ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ সব কথা বলেন।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সারাবাংলার বিশেষ প্রতিনিধি এমএকে জিলানী।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিভিন্ন অনলাইন নিয়ন্ত্রণে সরকার সাইবার আইন করছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছে। তাহলে ডাটা সিকিউরিটি অ্যাক্ট কেন করা হবে না? ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং ডাটা সিকিউরিটি অ্যাক্ট দুইটিই কিন্তু সিকিউরিটি। জনগণকে আপনি যে ডাটাটা দিচ্ছেন সেটা কি নিরাপদ? সে ডাটাটা আসলে কি সঠিক? এটার ওপর তো জনমানুষের জীবন নির্ভর করবে? এইসবের সত্যতা যাচাই ডাটা সিকিউরিটি অ্যাক্টের কোনো বিকল্প নেই।’
দেবপ্রিয় বলেন, ‘আজকে করোনায় কতজন মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন, কতজন মানুষ মারা গেছেন? এই সংখ্যার ওপর যদি আমরা আস্থা না রাখতে না পারি তাহলে কালকে আমি কীভাবে কোভিড মোকাবেলায় নিজের জীবনকে দাঁড় করাব? এটা কি আমি পারব? বাজার কি পারবে দোকান খুলতে? বাজার কি পারবে আবার বিনিযোগ করতে?’
তিনি বলেন, ‘সরকারের চারটি স্তম্ভের মধ্যে তিনটি হলো রাষ্টীয় কাঠামো।একটি বিচার ব্যবস্থা, একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা, একটা আইনসভা। তার সঙ্গে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলো মিডিয়া। মিডিয়া যদি ভালো থাকে, কার্যকর থাকে তাহলে বাকি তিনটি স্তম্ভ ভালো থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, নতুন তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে তথ্যরে ওপর যে বড় ধরনের দায়ভার এসেছে। ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে গরিব মানুষ কী রকম আছেন? জাতির মাথাপিছু আয় নয় বরং গরিব মানুষটির মাথাপিছু আয় কত? এগুলো যাচাই করে দেখার সময় এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিখাতের ক্রেডিট কার্ড, সেলফোন ইত্যাদিতে নতুন ধরনের তথ্য উপাত্ত যুক্ত হচ্ছে। এগুলো ব্যবহার করে রাষ্ট্রের একটা পঞ্চম স্তম্ভ দাঁড় করাতে হবে। অর্থ্যাৎ সরকারের কাছে, দেশের কাছে, জনগণের কাছে আস্থা অর্জনকারী তথ্যেন উৎস না থাকলে নীতি প্রণেতারা যেমন সঠিক নীতি প্রযোগ করতে পারেন না। কোন বিনিযোগকারী বাজারে কোথায় বিনিয়োগ করবেন সেটা বুঝতে পারবেন না। নাগরিকরাও বুঝতে পারবে না সে গুণমানসম্পন্ন সেবা পাচ্ছে কিনা? অর্থাৎ কোন নাগরিক ঐ যে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেটটা নিলো সেটা যে ভুয়া এটি যদি আমার সরকারের কাছে বলার জায়গা না থাকে। তাহলে কিছুই হবে না।’
সিপিডির এ ফেলো আরও বলেন, ‘এক সময় সাবেক দুই প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও শাহ এএসএম এ কিবরিয়ার সময়ে অর্থনীতি নিয়ে সমালোচনা করলে তারা দুইজন আমাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন। তুমি যে কথাগুলো বলতে সেগুলোর অর্থ কী? আর একটু পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলো। আমি বুঝিয়ে বললে, তিনি সে কথাগুলো গ্রহণ করতেন। তখন তারা আমরা হয়ে আমলাদের সঙ্গে তর্ক করতেন।’
তিনি বলেন, ‘আগের অর্থমন্ত্রীরা নিজের প্রতি নিজে অনেক বেশি আস্থাবান ছিলেন। সে জন্য তারা তর্ক বিতর্কে যেতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। কিন্তু আমরা পরবর্তীতে লক্ষ করেছি যে, ক্রমান্বয়ে তর্ক-বিতর্ক করার যে তথ্য উপাত্তের সঠিকতা যাচাই করার যে প্রয়াস, সে ধরনের প্রথা থেকে আমরা ক্রমান্বয়ে দূরে সরে গেছি। কিন্তু এখন যেন সব অটো পাইলটে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেটি ধরতেই পারছি না।’