Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়’


৯ আগস্ট ২০২০ ১৮:৩৮

ঢাকা: সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, গবেষণা ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় স্থানে; যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল এক অর্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্টজনরা।

রোববার (৯ আগস্ট) এ সংক্রান্ত এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তারা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিইট (ব্রি) এই ওয়েবিনারটি আয়োজন করে। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন কৃষিসচিব মো. নাসিরুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহাজাহান কবীর। মুখ্য আলোচক ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।

ওয়েবিনারে বক্তরা বলেন, ইউএসডিএ ধানের উৎপাদন নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, গত বছরের তুলনায় উৎপাদন শূন্য দশমিক ২৮ ভাগ কমে যাবে, কিন্তু বাস্তবে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে ৩৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে। ব্রি’র জরিপ থেকে গত দশ বছরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদন চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ২০১০ সালে যেখানে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল চতুর্থ, সেখানে বর্তমানে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

আলোচনায় বলা হয়, ফলন, আবাদকৃত এলাকা, উৎপাদন ও চালের অভ্যন্তরীণ মজুদ পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের তুলনায় এ বছর সব কৃষিঅঞ্চলে ধানের ফলন বেড়েছে এবং এ বৃদ্ধির হার সারাদেশে গড়ে শতকরা ৮ দশমিক ৪ ভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) ৬৪ জেলার ক্রপ-কাট’র ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, ধানের ফলন গড়ে ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ব্রি’র ১ হাজার ৪৮টি কৃষকের মাঠে ক্রপ-কাট’র ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে, সারাদেশে ধানের ফলন গড়ে ২ দশমিক ৮ ভাগ বেড়েছে।

ব্রির গবেষণায় দেখা যায়, চালের উৎপাদন গতবছরের তুলনায় প্রায় ৩ দশমিত ৫৪ ভাগ বেড়েছে। অপরদিকে, ডিএই’র ক্রপ কাটের তথ্যানুযায়ী ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ব্রি’র ক্রপ কাট অনুযায়ী ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বোরো মৌসুমে এ বছর চালের উৎপাদন হয়েছে ২০ দশমিক ২৬ মিলিয়ন টন, যা গতবছরের তুলনায় প্রায় ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভালো আবহাওয়া, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা, দাম কমানোর ফলে ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, ব্রি-ডিএই যৌথ উদ্যোগে ১৪টি কৃষি অঞ্চলে আঞ্চলিক কর্মশালা, বোরো মৌসুমের শুরুতে কৃষক প্রশিক্ষণ এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণে সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

এ বছর বোরো ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষক আউশ চাষে ঝুঁকেছে। ফলে গতবছরের তুলনায় প্রায় ১৮ ভাগ বেশি জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। এবার আউশের প্রত্যাশিত উৎপাদন হবে ৩ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন টন। কিন্তু ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৩১টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আউশের প্রত্যাশিত উৎপাদন কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বক্তারা বলেন, বিসিআর ক্যালকুলেট করে দেখা গেছে এবার বোরো ধান চাষ লাভজনক ছিল। ধান কাটা মৌসুমে কাঁচাধানের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি থাকায় কৃষকের মোট আয় শতকরা ১৬ দশমিক ৭ ভাগ বেড়েছে। বোরো ধান চাষীদের তথ্য মতে, এবছর তারা গড়ে বিঘাপ্রতি ১ হাজার ৬০৪ টাকা লাভ করেছেন; যেখানে গতবছর তাদের লোকসান গুনতে হয়েছিল। এবছর ফসল কাটার সময়ে এবং ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে কৃষক গতবছরের তুলনায় কম পরিমাণ ধান বাজারে বিক্রি করেছেন। একদিকে ভবিষ্যৎ খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা, অন্যদিকে ধানের দাম বেশি থাকায় অল্প ধান বেচেই কৃষক কৃষি ও পরিবারের খরচ বহন করতে পেরেছেন। অধিকন্তু বেশি দামের আশায় ধান মজুদ করার প্রবণতা বাড়তে দেখা গেছে।

তবে ধান চালের মজুদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ধানের ক্ষেত্রে গতবছর জুন মাসে কৃষকের গোলায় মোট মজুদের ২০ শতাংশ ধান ছিল, যা এবছর একই সময়ে প্রায় ২৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালে অধিক লাভের আশায় একধরনের নতুন বিনিয়োগকারী যোগ হয়েছে, যারা এ সময় ধানে বিনিয়োগকে নিরাপদ মনে করছে। এসব কারণে এবছর মিলারদের ধান মজুদের পরিমাণ গতবছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল।

অন্যদিকে চাল মজুদের বেলায় দেখা যায় যে, ভোক্তাশ্রেণি ভবিষ্যৎ খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা থেকে আতঙ্কিত হয়ে বেশি পরিমাণ চাল মজুদ করেছেন। অপরদিকে, সরকারসহ (গতবছর জুন পর্যন্ত সরকারি মজুদ ছিল ১২ দশমিক ৫৬ লাখ টন, যা এবার কমে ৯ দশমিক ২৭ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে) অন্যান্য চাল ব্যবসায়ীরা গতবছরের তুলনায় কম পরিমাণে চাল মজুদ করেছেন। সার্বিকভাবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ধান-চাল মজুদের প্রবণতা কিছুটা বেশি থাকলেও সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হয়নি।

তারা আরও বলেন, চাল উৎপাদন খরচের ক্ষেত্রে মৌসুমে বিদ্যমান সর্বনিম্ন দামে মিলাররা যে ধান কেনেন সেটি থেকে কেজি প্রতি চাল উৎপাদনে ২৭ দশমিক ৮৬ টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে সর্বোচ্চ দাম বিবেচনায় দেখা যায় কেজিপ্রতি চাল উৎপাদনে ৩৫ দশমিক ৮০ টাকা খরচ হয়। গড় বিবেচনায় এক কেজি চাল উৎপাদনে ৩২.৩৪ টাকা ব্যয় হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, বিদ্যুৎ বিল, যানবাহন ও শ্রমিক খরচ বাড়ার কারণে এবছর মিলিং খরচ ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খরচ বাড়লেও এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, সরকার ঘোষিত দামে চাল বিক্রি করে মিলাররা লাভবান হচ্ছেন।

ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. এস এম নাজমুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ‎প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভান্ডারি, এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

তৃতীয় ধান উৎপাদন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিইট (ব্রি)


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর