লেবাননের আন্দোলন থেকে সরকার পতনের ডাক
১০ আগস্ট ২০২০ ০০:০৪
বৈরুত বন্দরে শক্তিশালী রাসায়ানিক বিস্ফোরণকে ঘিরে অশান্ত হয়ে ওঠা গণজমায়েত থেকে লেবাননের সরকার পতনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। খবর রয়টার্স।
রোববার (৯ আগস্ট) বৈরুতের রাস্তা থেকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে কয়েকজন মুখপাত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবারের (৪ আগস্ট) ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৫৮ জনের মৃত্যু ও ছয় হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার পেছনে রাজনীতিবিদদের অবহেলা দায়ী উল্লেখ করে বিক্ষোভকারীরা বৈরুতের রাস্তায় রাস্তায় শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য এরই মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে লেবাননের এক শীর্ষ খ্রীস্টিয় যাজক রয়টার্সকে বলেছেন, শাসনের ধারা বদলাতে পারছেন না যারা, তাদের উচিত মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা উচিত। এক্ষেত্রে, একজনের পদত্যাগ কোনো সমাধান নয়। দেশ পুনর্গঠনে ব্যর্থ সরকারেরই পদত্যাগ করতে হবে।
ইতোমধ্যেই, ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় লেবানন সরকারের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে রোববার (৯ আগস্ট) পদত্যাগ করেছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী মানাল আব্দুল সামাদ।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে সরকার ব্যবস্থায় দুর্নীতি, অপশাসন, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে এবং বেকার সমস্যার সমাধান চেয়ে হাজার হাজার মানুষ ‘হোয়াটসঅ্যাপ আন্দোলন’ কে ঘিরে রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ।
তারপর, বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ বিক্ষোভেই দেশটিতে সবচেয়ে বড় জনসমাগম বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এদিন মার্টার্স স্কয়ারে সমবেত হয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ওই সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। সন্ধ্যার দিকে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিক্ষোভস্থল।
রয়টার্স জানিয়েছে, লেবাননের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে টার্গেট করে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল মন্ত্রণালয়ের দখল নিয়ে নেয়। ওই মন্ত্রণালয়কে ‘বিপ্লবের কেন্দ্র’ ঘোষণা করে লেবাননের জনগণকে রাস্তায় নেমে এসে দুর্নীতিবাজের বিচারের দাবি তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উপস্থিত বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে অনেকেই বলেছেন, তারা চান জাতিসংঘ লেবাননের শাসনভার গ্রহণ করুক।
অন্যদিকে, বিস্ফোরণে ধসে পড়া একটি ফ্যাশন কোম্পানির ১০ তলা ভবনের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে ওই কোম্পানির ম্যানেজার বলেন, এই ধ্বংসযজ্ঞ আমাদেরকে ৫০ বছর পেছনে নিয়ে গেছে। আমরা লেবাননে সংকটের পর সংকটে ভুগছি। এখন সরকারের পদত্যাগ করে যোগ্য মানুষদেরকে দেশ শাসন করতে দেওয়ার সময়।
প্রসঙ্গত, বৈরুতের বন্দরের গুদামে ২ হাজার ৭৫০ টন বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছয় বছর ধরে অনিরাপদ অবস্থায় মজুত করে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট। বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, এ কারণেই ঘটেছে এত বড় বিস্ফোরণ। সরকার এর জন্য দায়ীদের উপযুক্ত বিচারের আশ্বাসও দিয়েছেন।