লাখ মৃত্যু ছাড়াল ব্রাজিলে, ২ কোটি আক্রান্তের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব
৯ আগস্ট ২০২০ ২৩:৫৭
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রাজিলেও করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ পেরিয়ে গেছে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও পেরিয়েছে ৩০ লাখের ঘর। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো করোনাভাইরাসের ‘পিক’ স্পর্শই করেনি দেশটিতে।
সাত মাস পেরিয়ে এসেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলেই এখনো ত্রাস ছড়িয়ে যাওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এভাবেই বেড়েই চলেছে। তাতে করে বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটির দোরগোড়ায় রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হয়তো সেই সীমায় পৌঁছে যাবে বিশ্ব।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ লাখ ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। দেশটিতে শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার মানুষ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ হাজারেরও বেশি কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হওয়ায় ভারতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২২ লাখ। দেশটিতে ৪৪ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ব্রাজিলে প্রথম তিন মাসে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৫০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তবে এরপর মাত্র ৫০ দিনেই এই ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে আরও ৫০ হাজার মানুষের প্রাণ।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ব্রাজিলে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এখন এক লাখ ৪৭৭। আর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ১২ হাজার ৪১২। তবে অনেকেরই ধারণা, দেশটিতে পর্যাপ্তসংখ্যক মানুষকে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি। ফলে আরও দেশটিতে আরও অনেক বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনাভাইরাসের এমন তাণ্ডবের মধ্যেও অনেক দোকান ও রেস্তোরাঁই নিজেদের কার্যক্রম শুরু হয়ে দিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারো নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সুস্থও হয়ে উঠেছেন। তবে শুরু থেকেই তিনি করোনাভাইরাস নিয়ে খুব একট বিচলিত ভাব দেখাননি। বলা যায়, এর প্রভাবকে পাত্তাই দেননি তিনি। রাজ্য সরকারগুলো করোনা মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার বিরোধিতাও করেছেন বলসোনারো। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় সমর্থকদের মাঝে হাজির হয়েছেন মাস্ক না পরেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটিতে প্রাদেশিক সরকারগুলো যেসব পদক্ষেপ নিতে চেয়েছে, বলসোনারোর কেন্দ্র সরকারের বাধার মুখে সেগুলোও বাস্তবায়ন করা যায়নি। আর কেন্দ্র সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপের অভাবের কথা তো বলাই বাহুল্য। এখন প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে এসে প্রদেশগুলোও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর উদ্যোগ নিচ্ছে। তাতে করে এই ভাইরাস আরও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
‘আশার আলো নেই’
করোনাভাইরাস সংকট শুরুর পর থেকে ব্রাজিলের দু’জন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর সঙ্গে ‘সামাজিক দূরত্ব’ মেনে চলা ও করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার নিয়ে মতানৈক্যের কারণেই সরে দাঁড়িয়েছেন তারা। বর্তমানে একজন আর্মি জেনারেল ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
করোনাকে ‘সামান্য ফ্লু’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসা বলসোনারো দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছেন, তবে নিজের অবস্থান বদলাননি। তার একগুঁয়েমি অবস্থানের কারণেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রের পরেই স্থান করে নিয়েছেন— এমন মনে করেন দেশটির অনেক মানুষই। ৩০ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত এবং লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর পরও প্রেসিডেন্টের অনড় অবস্থানে তাই তারা আশার আলোও দেখছেন না সামনের দিনগুলোর জন্য।
ব্রাজিলের সংক্রামক ব্যধি বিষয়ক সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. হোসে দাভি উরবায়েজ রয়টার্সকে বলেন, করোনাভাইরাস অনেকটা বিশ্বযুদ্ধের ট্র্যাজেডির মতো। সরকারের কৌশল হলো— করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হও, অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তোমার জন্য নিবিড় পরিচর্যার সুযোগ আছে! করোনা নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতির সারসংক্ষেপ এটিই।
এ পরিস্থিতিতে ড. উরবায়েজ মনে করছেন, ব্রাজিল যেন সমষ্টিগতভাবেই চৈতন্যবিলুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, ফলে এ অবস্থায় আমাদের পরিপূর্ণ নৈরাশ্যের মধ্যেই বসবাস করা উচিত।
বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ–মৃত্যু বাড়ছেই
সাত মাস পেরিয়ে এসেও বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি কোনোভাবেই কমছে না। তাতে করে সারাবিশ্বের সাত লাখেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন, যে সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। আর সারাবিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যাও দুই কোটি ছুঁই ছুঁই।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, রোববার মধ্যরাতের আগে আগে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন সাত লাখ ৩১ হাজার ৭২৭ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৭। অর্থাৎ আর ৮০ হাজার মানুষ বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হলেই দুই কোটি মানুষ এই ভাইরাসের কবলে পড়বেন। যে গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে আগামীকালই হয়তো দুই কোটির এই সীমাও ছাড়িয়ে যাবে করোনা। আর তারপরও এটি কোথায় গিয়ে থামবে, তা বলতে পারছেন না কেউই।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি
দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল গত ৮ মার্চ। সে হিসাবে পাঁচ মাস অতিক্রম করার পরও থেমে নেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। রোববার পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই ভাইরাসে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৩২ শতাংশ, ৩ হাজার ৩৯৯ জন মারা গেছেন। বিপরীতে আক্রান্তের ৫৭ দশমিক ৬০ শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সংখ্যায় এর পরিমাণ ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭০ জন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা করা হয়েছিল। টানা ৬৬ দিন চলে সেই ছুটি। পরে করোনার সংক্রমণ না কমলেও সেই ছুটিও তুলে নেওয়া হয়। সীমিত আকারে অফিস খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। একে একে অনুমতি দেওয়া হয় বিপণী বিতান খোলার, রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার। একটা সময় পর্যন্ত বিকেলের পর থেকে বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পরে সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। বর্তমানে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘নিষেধাজ্ঞা’ রয়েছে।
এদিকে, দোকানপাট খোলা রাখার সময়সীমাও সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সরকারের অনুমতিতে গণপরিহনও চলছে, তবে সেটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে। যদিও ঈদের সময় সেই স্বাস্থ্যবিধি অনেক ক্ষেত্রেই লঙ্ঘিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে সরকারি অফিসগুলোতে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সুবিধাও তুলে নিয়েছে সরকার। এখন কেবল বৃদ্ধ, অসুস্থ ও গর্ভবর্তী ছাড়া বাকি সবাইকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ৯টা-৫টা অফিস করতে বলা হয়েছে। তবে বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরার বিধান এখনো বলবৎ রেখে সরকার।
১ লাখ মৃত্যু ৩০ লাখ সংক্রমণ করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস করোনায় মৃত্যু কোভিড-১৯ দুই কোটি সংক্রমণ বাংলাদেশ ব্রাজিল ভারত যুক্তরাষ্ট্র