ঘাতকদের চিনে ফেলাতেই ‘ট্রিপল মার্ডার’, গ্রেফতার ৮
৯ আগস্ট ২০২০ ০১:১৫
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর): পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় চাঞ্চল্যকর ‘ট্রিপল মার্ডারে’র রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। জানা গেছে, হত্যার শিকার অটোচালক পরিবারের বাড়িতে সিঁদ কেটেছিল ডাকাত দল। সেই দলের এক সদস্যকে চিনে ফেলার কারণেই পরিবারের তিন সদস্যকে বাঁচিয়ে রাখার ‘ঝুঁকি’ নেয়নি ডাকাত দল।
শনিবার (৮ আগস্ট) রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের তথ্য তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান। জানান, মূল হোতাসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত মোট আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ৩১ জুলাই সকালে উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের একটি বসতঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় হাত বাঁধা তিন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছিল, ৩০ জুলাই রাতেই তাদের হত্যা করে হাত বেঁধে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়েছিল ঘাতকরা। হত্যার শিকার আয়নাল হক (৩৫) অটোরিকশা চালাতেন। বাকি দু’জন তার স্ত্রী খুকু মনি (২৫) ও তাদের ৩ বছরের মেয়ে আশফিয়া। লোমহর্ষক ও আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের ৯ দিনের মাথায় এসে হত্যাকারীরা ধরা পড়লো।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান জানান, এদিন ভোরের দিকে উপজেলার ধানীসাফা থেকে গ্রেফতার করা হয় ট্রিপল মার্ডারের প্রধান আসামি অলি বিশ্বাস (৩৮) ও রাকিবকে (২০)। মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে তারা গ্রেফতার হয়। পরে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও লুটের টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার অলি উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের মৃত তুজাম্বর আলী বিশ্বাসের ছেলে, রাকিব একই গ্রামের কাওসার বেপারীর ছেলে।
জেলা পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মুখোশধারী চার জন ঘাতক দস্যুতার জন্যই সিঁদ কেটে আয়নালের বসত ঘরে প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকে মারধর করে নগদ টাকা ও বিভিন্ন মালামাল লুট করে। এ সময় আয়নাল দস্যু ও অটোচালক অলিকে চিনে ফেলে অনুনয় বিনয় করে বলেন, ‘অলি, তুই মোরে মারিস না, টাহা-পয়সা যা আছে লইয়া যা।’ কিন্তু তাকে চিনতে পারাই হয়তো কাল হয়েছিল আয়নালের। চার ঘাতক মিলে আয়নাল ও তার স্ত্রী খুকুর হাত বেঁধে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এসময় আয়নালের ৩ বছর বয়সী মেয়ে আশফিয়া কান্নাকাটি করলে ঘাতকরা তাকেও গলা টিপে হত্যা করে।
পুলিশ সুপার জানান, গত ৮ জুলাই নিহত আয়নাল স্থানীয় সাফা বন্দর কৃষি ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা তুলেছিলেন। ঘাতক অলি ওই সময় তাকে দেখে ফেলেন। এ ছাড়াও আয়নালের ঘরে কিছু স্বর্ণালংকার থাকার কথাও জানতে পেরেছিলেন অলি। সহযোগীদের নিয়ে ওই টাকা আর স্বর্ণালংকার লুট করার পরিকল্পনা করেছিলেন অলি। তা করতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত আয়নাল এবং তার স্ত্রী ও কন্যাকে হত্যা করে আসে তারা।
এর আগে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে একই গ্রামের মালেক (৫৫), শামীম গাজী (২৬), রহিম (১৯), মাহাবুব (২০), সাকিল (১৯) ও শাহিনকে (১৯) গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। শনিবার ভোরে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা দু’জনকে গ্রেফতার করা হলো।
ট্রিপল মার্ডার পরিবারের ৩ সদস্যকে হত্যা মঠবাড়িয়া রহস্য উদঘাটন