‘স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অর্জন’
১০ আগস্ট ২০২০ ০২:৩৮
বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়াকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শতবর্ষের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাবি উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, কেবল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দেওয়াই নয়, মায়ের ভাষায় কথা বলার সুযোগ করে দেওয়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান। বুদ্ধিভিত্তিক উপাদানের জোগান দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে যে ভূমিকা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই অর্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির জনক তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে না যে বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, এবং সেই রাষ্ট্রটিই আবার অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
লন্ডনে ঢাবি’র সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ও সংকট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শনিবার লন্ডন থেকে সম্প্রচারিত ওয়েবিনারে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। একটি জাতিকে মুক্তি সংগ্রামের মূল লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে এই মহিয়সী নারীর ভূমিকা ছিলে অপরিসীম।
শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জন ও সংকট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ঢাবি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকেই পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ডের সঙ্গে তুলনা করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ শতাংশ রিসার্চ গ্র্যান্ট পেয়ে থাকে। কিন্তু ঢাকা স্বায়ত্তশাসিত হলেও বাজেটে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন বরাদ্দ নেই।
অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ১১ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ২০ জনের জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক। এতে কমসংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে মান বজায় রাখা কঠিন কাজ। তবে ইতিবাচক দিক হলো— এই শিক্ষার্থীদের ৩০ শতাংশেরও বেশি নারী। আর সংকটের জায়গাটি হলো— শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিচ্ছেন, যা উন্নত বিশ্বেও সচরাচর দেখা যায় না। সত্যিই এত শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা ভাবার সময় এসেছে।
যুক্তরাজ্যের লিংকন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার ও কমনওয়েলথ অ্যাডভাইজর কমিশনের পরামর্শক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনগুলো ঠিকমতো উপস্থাপন করতে পারার প্রচেষ্টায় ঘাটতি রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অর্জন রয়েছে, শিক্ষকদের যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু পাবলিক রিলেশন টিম খুবই দুর্বল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
ডক্যুমেন্টেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে গেছে স্বীকার করে শতবর্ষকে সামনে রেখে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।
ফেসবুক ও ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত এক ঘণ্টার ওই আলোচনা সঞ্চালনা করেন একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের ম্যানেজমেন্টের সদস্য তানভীর আহমেদ। আলোচনার প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের ম্যানেজমেন্টের সদস্য থার্ড সেক্টর কনসালট্যান্ট বিধান গোস্বামী, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সোনালী ব্যাংক ইউকের সাবেক ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ আমীরুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার অজয় রায় রতন, ব্যারিস্টার চৌধুরী হাফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার কাজী আশিকুর রহমান, আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম, আইনজীবী ইউসূফ ইকবাল, আইনজীবী ঝুমুর দত্ত, রওশন আরা জাহান পলি, সংবাদ পাঠিকা হিমিকা আযাদ, রেহানা ফেরদৌস মনি ও সংগীতশিল্পী শুভ্রা মুস্তাফা।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম অর্জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবি ঢাবি ক্লাব ইউকে শতবর্ষ স্বাধীনত বাংলাদেশের জন্ম