কাজ না করেই টিআর প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
১০ আগস্ট ২০২০ ১৪:৫৮
রাজবাড়ী: জেলার সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের কাজ না করেই আড়াই লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে দুই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর নামে বরাদ্দকৃত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দ্বিতীয় পর্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পগুলোর মধ্য থেকে বসন্তপুর ইউনিয়নের ১ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দু’টি প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কাগজে-কলমে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ দেখানো হয়। উপজেলা সহকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিজয় কুমার প্রামাণিককে ম্যানেজ করে প্রকল্পের পুরো টাকাও তুলে নেন প্রকল্পের সভাপতিরা। কিন্তু বাস্তবে প্রকল্প দু’টিতে কোনো কাজই হয়নি।
১ নম্বর ওয়ার্ডের শায়েস্তাপুর ঈদগাহ থেকে ইসলাম মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। রোববার (৯ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে এই প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, এই রাস্তায় এক ঝুঁড়ি মাটিও ফেলেননি প্রকল্পের সভাপতি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক মুকুল। অথচ প্রকল্পের পুরো ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় ইসলাম মোল্লা, হাবিবুর রহমান, সোহরাব আলী ফকির ও জামাল মোল্লা বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তা দিয়ে আমাদের খুব কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। গত একবছরের মধ্যে এই রাস্তায় কোনো কাজ তো দূরের কথা এক ঝুঁড়ি মাটিও ফেলা হয়নি। আমরা চাই দ্রুত রাস্তাটিতে মাটি ফেলে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হোক।’
অপরদিকে, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বড় ভবানীপুর গ্রামের জুবায়েরের পোল্ট্রি ফার্ম থেকে ফাহিম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত ইটের রাস্তার পাশে মাটি ফেলে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই প্রকল্পে রাস্তাটিতে নামমাত্র কিছু মাটি ফেলেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহিন ফকির শাফিন। রাস্তাটিতে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকার মাটি ফেলা হতে পারে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসীর ধারণার সত্যতা মিলেছে ওই রাস্তার মাটিকাটার সরদার মো. জিন্নার কথায়। মো. জিন্না জানান, গত ঈদুল আজহার ৭-৮ দিন আগে প্রকল্পের সভাপতি শাহিন ফকির শাফিন তাকে একদিনের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চুক্তি করেছিলেন। পরে তাকে দিয়ে তিন দিন কাজ করানো হয়। প্রতিদিন তার ৬ জন করে শ্রমিক রাস্তার দুই পাশে মটি ফেলে ২ ফুট করে সম্প্রসারণ এবং ময়লা পরিস্কারের কাজ করেন। এতে তিন দিনে তারা মোট ১২ হাজার টাকার কাজ করেন। এর বাইরে ওই রাস্তায় আর কোন কাজ হয়নি। অথচ, এই প্রকল্পের পুরো ১ লাখ ২৯ হাজার টাকাই তুলে নিয়েছেন শাহিন ফকির শাফিন।
প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বসন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মীর্জা বদিউজ্জামান বাবু বলেন, “টিআর প্রকল্প দু’টি আমাদের এমপি মহোদয়ের বিশেষ বরাদ্দের। এলাকাবাসী আমার কাছে অভিযোগ করলে আমি সরেজমিনে প্রকল্প দু’টি পরিদর্শন করেছি। প্রকল্পের সভাপতিরা টাকা তুলে নিলেও আসলে রাস্তা দু’টিতে কোন কাজ করা হয়নি। এটি চরম একটি দুর্নীতি। ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
বসন্তপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘আমিনুল হক মুকুল এবং শাহিন ফকির শাফিনের বিরুদ্ধে ইউনিয়নে অনিয়ন-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা যে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন; আমাদের ইউনিয়নে এই দুই ব্যক্তির অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে তারা যেহেতু আমাদের দলেরই লোক; তাই তাদের কারণে আমাদের দলেরও বদনাম হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আমিনুল হক মুকুলের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। শাহিন ফকির শাফিনের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনিও কল রিসিভ করেননি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাঈদুজ্জামান খান বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা ছিলো না। আমি বিষয়টি তদন্ত করবো। যদি প্রকল্পের সভাপতিরা রাস্তায় কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস বলেন, ‘আমিনুল হক মুকুল কাজ না করে টাকা তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি আগামী সাত দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে দেবেন বলে আমার কাছে সময় চেয়েছেন। শাহিন ফকিরের প্রকল্পের কাজও যাতে শতভাগ সম্পন্ন করা হয় এ জন্য উপজেলা সহকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা সহকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিজয় কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘আমি আমিনুল হক মুকুল ও শাহিন ফকির শাফিনকে ডেকেছিলাম। তারা রাস্তার কাজ শেষ করবেন।’ তবে প্রকল্পের কাজ না করে কিভাবে টাকা তোলা হলো সে বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি।
আওয়ামী লীগ গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টপ নিউজ বসন্তপুর ইউনিয়ন