‘সিনহা হত্যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে ৪ পুলিশ’
১১ আগস্ট ২০২০ ০০:১৭
ঢাকা: কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত চার পুলিশকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে ওই চার পুলিশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তবে তাদের দেওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য চারজনকে ফের ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। বুধবার (১২ আগস্ট) শুনানি শেষে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।
সোমবার (১০ আগষ্ট) সন্ধ্যায় র্যাব সদরদফতরে আলোচিত এ ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় তার বোনের করা মামলায় চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা গুরুত্বপূর্ণ এবং চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিয়েছেন। তাই অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই চারজনকে আরও ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে বুধবার শুনানি শেষে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।’
লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আদালত সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১০ দিনের মধ্যে সব কার্যক্রম জানাতে বলেছিল। তদন্ত কর্মকর্তা এরই আলোকে কার্যক্রম শুরুও করে। কিন্তু অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কর্মকর্তা বেঁধে দেওয়া সময় উম্মুক্ত করার জন্য আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।’
সিনহা হত্যা সংক্রান্ত চার মামলাও তদন্ত করবে র্যাব
মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে সিনহা রাশেদের মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সিনহার বোনের করা মামলার অন্যতম সাক্ষী সিফাত আজ জামিনে মুক্ত হয়েছেন। এছাড়া গতকাল শিপ্রা জামিনে মুক্ত হন। এর আগে সিফাত-শিপ্রার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছিল পুলিশ।
এর মধ্যে দুটি টেকনাফ থানায়, অন্যটি রামু থানাতে। এদিকে সিফাত-শিপ্রার বিরুদ্ধে যে তিনটি মামলা হয়েছে সেগুলো তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে র্যাব। অর্থাৎ, সিনহা নিহতের ঘটনায় যে চারটি মামলা হয়েছে সবগুলোর তদন্তের দায়িত্ব পেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনীটি।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান।
র্যাবের মুখপাত্র আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব গণমানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে সেই হিসেবে এই মামলাটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত হয়ে তদন্ত করবে। মামলার অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করা। পাশাপাশি কী কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে র্যাব কাজ করছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মূলত যে চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে প্রত্যেকে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার খুঁটিনাটি এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানিয়েছে তারা।’
তিনি বলেন, ‘টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার সাহা, ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও এসআই নন্দলাল রক্ষিত এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সিফাত এবং শিপ্রা দুজনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। তদন্ত কর্মকর্তা যেহেতু মনে করছেন- তদন্তের শুরুতে সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তাই মূল অভিযুক্তদের পর্যায়ক্রমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সিফাত ও শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে একটি মাদক মামলা। অন্য দুটির মধ্যে রয়েছে- সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশ বাদি মামলা। এই তিনটা মামলা র্যাব তদন্ত করছে। এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। সেই মামলার আলামত ও সাক্ষীসহ সবকিছু র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা বুঝে নেবেন।’
ঘটনার সময় লুট হওয়া ল্যাপটপ ও ক্যামেরার বিষয়ে র্যাব কী করবে?- জানতে চাইলে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি এসব জিনিস আলামত হিসেবে দেখানো হয়নি। তবে এই ঘটনায় দুজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তারপরই পুলিশের যারা সিজারলিস্ট করেছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ‘
তদন্ত কর্মকর্তাকে অন্য অফিসাররা সাহায্য করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সার্বিক নির্দেশনায় অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করছে। কারণ তদন্ত কর্মকর্তা যে কারও সহযোগিতা নিতে পারেন। এ ব্যাপারে তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।’
শিপ্রা দেবনাথকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিপ্রা একটি স্পর্শকাতর কথা বলেছেন। তা হলো- এটা তার জীবনের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও তিনি বিচার দেখে যেতে চান। প্রয়োজনে ন্যায় বিচারের স্বার্থে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। কিন্তু এই ঘটনার পর তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্থ। সে কারণে তাদের বিশদভাবে জিজ্ঞাসাবাদ সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। কারণ একটি ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সাক্ষী। তেমনি মেজর সিনহা নিহতের ঘটনায় সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ অন্যতম সাক্ষী।’