বিশ্বের কল্যাণ কামনায় মন্দিরাঙ্গনেই সীমাবদ্ধ এবার জন্মাষ্টমী

ঢাকা: দেশবাসীকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে সমস্ত বিশ্বের কল্যাণ কামনায় সনাতন সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবান শ্রী কৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিক বিবেচনায় সীমিত পরিসরে প্রার্থনা যজ্ঞে বিশ্বের কল্যাণ কামনায় শুভ জন্মাষ্টমীর সব আনন্দ উৎসব এবার মন্দিরাঙ্গনে সীমাবদ্ধ রেখে পালন করা হচ্ছে।

এ দিনটিতে সারাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী পালন করেন। তবে এবার জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠান যথারীতি ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে পালিত হচ্ছে। জন্মাষ্টমী সংশ্লিষ্ট সব আচারণীয় ধর্ম ও অনুষ্ঠানমালা মন্দিরাঙ্গনে সীমাবদ্ধ থেকে পালন করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিকটি মাথায় রেখে মন্দির প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে সীমিত পরিসরে ভক্তরা জন্মাষ্টমীর আনন্দ উৎসব পালন করছে। এবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সব প্রকার সমাবেশ, শোভাযাত্রা বা মিছিল করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে অশুভ শক্তিকে দমন করে সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় ধরাধামে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তার আবির্ভাব বিশ্বের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষকে রক্ষায় তিনি পরিত্রাতার ভূমিকা পালন করেন, অন্ধকার সরিয়ে পৃথিবীকে আলোয় উদ্ভাসিত করেন।

পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের আরও বিশ্বাস, দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের মাঝে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও জেলা, মহানগর শাখাসমূহের মধ্যে ভার্চুয়াল সভার মতামতের আলোকে বৈশ্বিক করোনা মহামারিজনিত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠান যথারীতি ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে পালন এবং জন্মাষ্টমী সংশ্লিষ্ট সকল অনুষ্ঠানমালা মন্দিরাঙ্গনে সীমাবদ্ধ থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সরেজমিনে দেখা যায়, জন্মাষ্টমী উপলক্ষে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকে মাথায় রেখে মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশের গেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করছিল।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর বিশ্বশান্তি কামনায় অঞ্জলি ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পূজার্থিরা বিশ্ব শান্তি কামনায়। দেশবাসীকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে সমস্ত বিশ্বের কল্যাণ কামনা করে যজ্ঞানুষ্ঠান হয়। এরপর পূজার্থিরা ভগবান প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী জানান, জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপনে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে একদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সকাল ৮টায় দেশ, জাতি ও বিশ্ব মঙ্গল কামনায় শংকর মঠ ও মিশন, সীতাকুন্ডের সন্ন্যাসীদের পরিচালনায় গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় ও রাতে শ্রী কৃষ্ণের পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পুরো অনুষ্ঠান সরকার নিদের্শিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এছাড়া ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠেও সকাল থেকে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানসহ গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী উদযাপন করা হয়। এখানে গীতা পাঠ করেন স্বামী দেবধ্যানানন্দ ও ব্রহ্মচারী ভাস্কর। মন্দিরে আসন গ্রহণ ও প্রসাদ গ্রহণের সময় ভক্তদের স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরিধান আবশ্যক বলে মঠের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আজ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকারি ছুটি। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জন্মাষ্টমী উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মন্ডল এক যৌথ বিবৃতিতে- জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান।

করোনাভাইরাস শ্রী কৃষ্ণ শ্রীকৃষ্ণ শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন স্বাস্থ্য সুরক্ষা