‘শেখ হাসিনা যতদিন আছেন নিজেদের মাইনোরিটি ভাববেন না’
১১ আগস্ট ২০২০ ১৪:৪১
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হিন্দু ধর্মালম্বীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, আপনাদের কোনো ভয় নাই। আপনারা নিজেদের মাইনোরিটি ভাববেন না। এ শব্দটি আপনাদের মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখবে। তাই আসুন, উন্নয়ন মানবিকতা আর সম্প্রীতির শত্রু সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলতে আমরা শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করি।’
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এখানে মসজিদ এবং পূজামণ্ডপ পাশাপাশি। একজন মানুষ অন্য ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়, বিপদে-আপদে সহযোগিতায় সহমর্মী হয়। আবহমানকাল থেকেই এই চর্চা হয়ে আসছে বদ্বীপ জনপদে। যারা সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ কিংবা উগ্রতা চর্চা করে প্রকৃতপক্ষে তারা ধর্মের মূল শিক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
দেশের উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোনো দেশেই প্রতিবেশীর সাথে খারাপ সম্পর্ক রেখে এগোতে পারে না। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এই দুই দেশের সম্পর্ক একাত্তরের রক্তের রাখি বন্ধনে আবদ্ধ। বর্তমানে এ বন্ধুত্ব ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে উষ্ণ ও সৌহার্দপূর্ণ। প্রতিবেশীর সাথে ভালো বোঝাপড়া থাকলে অনেক অমীমাংসিত ইস্যু সহজে সমাধান সম্ভব যার প্রমাণ বাংলাদেশ ভারত দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যা ছিটমহল বিনিময় সমাধান দুই দেশের পারস্পরিক আস্থাকে বাড়িয়ে তুলেছে।’
হিন্দু ধর্মালম্বীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে সকলের সমান সুযোগ এবং অধিকার রয়েছে। আপনারা নিজেদের মাইনোরিটি ভাববেন না। নাগরিক হিসেবে একজন মুসলমানের রাষ্ট্রের প্রতি যে অধিকার আপনারও সমান অধিকার। শেখ হাসিনার সরকার কথায় এবং কাজে একথা বিশ্বাস করে। তাই অসাম্প্রদায়িক চেতনা দিয়েই আমরা গড়ে তুলতে চাই এদেশের সমৃদ্ধির সোপান। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, আপনাদের কোনো ভয় নাই।’
প্রতিবছর দেশে শারদীয় দুর্গোৎসবসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সব উৎসব যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার মাধ্যমে পূজা উদযাপনে সহযোগিতা করে আসছে। ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছিল তা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। সে নির্যাতন একাত্তরে পাক-হানাদারদের নির্যাতনকে মনে করিয়ে দেয়। শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সুযোগ পেলেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আঘাত হানে নানান কৌশলে। তাদের অপচেষ্টা এখনো চলছে। তারা এখনও সক্রিয়। বিষদাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে বলে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, সচেতন থাকতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শ্রীকৃষ্ণের প্রতিটি উপদেশ আজ এতো বছর পরেও প্রাসঙ্গিক প্রতিটি ধর্মই নীতিবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মের অনুশাসন মেনে চললে ব্যক্তির জীবন যেমন আলোকিত হবে তেমনি সামাজিক হানাহানি বন্ধ হয়ে গড়ে উঠবে শান্তিময় মানবিক সমাজ। তাই আসুন আমরা সে সমাজ গড়ার প্রত্যয় কাজ করি সবাই সম্মিলিতভাবে।’
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মজুমদারসহ অন্যরা।