ঢাকা: পৃথিবীতে সারাবছরই মানুষ কোনো না কোনো ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর আগে ডেঙ্গু, কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, নিপা ভাইরাসের মতো বিভিন্ন রোগও মহামারি আকারে ছড়িয়েছে। আবার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি একশ বছর পর পর বড় ধরনের মহামারির আবির্ভাব ঘটে থাকে পৃথিবীতে, যা লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক এখন যেমন করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত হয়েছে। তবে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের মাধ্যমে এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সারাবাংলা ডটনেট আয়োজিত সমসাময়িক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠান ‘নিউ নরমাল’-এ বক্তারা এসব কথা বলেন। সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সৈকত ভৌমিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেয়ডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ বলেন, যাত্রার শুরু থেকেই অণুজীবদের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে মানবজাতিকে। আমরা লড়াই করে টিকে আছি। আমাদের মাঝে চারটি বড় বড় ভাইরাস এসেছিল, একশ বছর পর পর। এসবের মধ্যে দিয়ে আমরা এগিয়েছি। তাই এসব বিষয় নিয়ে আমাদের গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা নিশ্চয়ই আমেরিকানদের মতো গবেষণা করবে না! আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী গবেষণাগার তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণ এগিয়ে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আর এ ক্ষেত্রে জনগণকে বোঝানোর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, যে ভাষায় কথা প্রয়োজন, তাদের সেটা বলতে হবে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে হঠাৎ করে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের সবার মুখে মাস্ক নেই। সেটা যেন তারা ব্যবহার করে, সেটা তাদের ভাষায় বলে তাদের বোঝাতে হবে।
গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে এই শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা বাড়াতে হবে। তাহলে কোনো ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হলে সেটি নিয়ে কাজ করার মতো দক্ষ জনবল তৈরি হবে। তাছাড়া সাধারণভাবে পাঠ্যপুস্তকে ভাইরাস নিয়ে পাঠ থাকতে হবে। মোট কথা ভাইরাস ও ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে ধারণ থাকলেই কিন্তু ভাইরাস প্রতিরোধ করা অনেকটাই সম্ভব হয়ে যাবে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জে. মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, একব্ছর আগে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু সেটি নিয়ে আমরা গবেষণা করতে পারিনি। মহামারি নিয়ে গবেষণার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান আমরা গড়তে পারিনি। আমাদের দেশে অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তাদের কাজ করার সুযোগও কম। তারপরও আমরা গত বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এ বছরও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যক্রম শুরু করি। বছরের শুরু থেকেই জনগণকে সচেতন করে তোলার কাজটি করে যাচ্ছিল আমাদের কর্মীরা। এমনকি করোনাভাইরাসের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা সচেতনতা তৈরির কাজটি করে গেছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুতে আক্রান্তের লক্ষণ প্রায় কাছাকাছি থাকায় অনেকেই করোনা নেগেটিভ এলে আর ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এ কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু টেস্ট কিটের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে, যেন সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তি দু’টি পরীক্ষাই করাতে পারেন।
মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডিএনসিসির এই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, লার্ভার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বাড়ির আশপাশের আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হবে। মাঠ পর্যায়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের প্রত্যক্ষ সংযোগ ছাড়া ডেঙ্গু বা করোনা— কোনোকিছুর বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ গড়া সম্ভব হবে না।