সারা হাউজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সৌদি প্রবাসীর
১৩ আগস্ট ২০২০ ০১:৪৮
ঢাকা: ৯ বছর আগে চুক্তি করে জমি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে। আড়াই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষে ভাগের অর্ধেক ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। আড়াই বছরের জায়গায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ফ্ল্যাট বুঝে পাননি সৌদি প্রবাসী মো. আব্দুল হক। বরং ভয়-ভীতি আর হুমকি-ধমকিই শুধু নয়, মারধরও করা হয়েছে আব্দুল হককে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছে সারা হাউজিংয়ের সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (১২ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মওলানা মো. আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন আব্দুল হক ও তার পরিবারের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হক বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর তিনি সৌদি আরবের মক্কায় ছিলেন। প্রবাস জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ডি ব্লকে তিনি পাঁচ কাঠা জায়গা কেনেন। ওই জায়গায় সাত তলা ভবন নির্মাণের জন্য সারা হাউজিংয়ের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ২০১১ সালের ৬ জুন চুক্তি করেন তিনি। চুক্তি অনুযায়ী ৩০ মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করে আব্দুল হককে দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল সারা হাউজিংয়ের। ফ্ল্যাট বুঝে না পেয়ে ২০১৬ সালে তিনি সারা হাউজিংকে নোটিশ দেন, পরে ঢাকার জেলা জজ আদালতে মিস কেস করেন। তাতে সারা হাউজিংয়ের মালিকানাধীন তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম তলায় ‘স্ট্যাটাস কো’ জারি করেন আদালত।
আব্দুল হক বলেন, এর মধ্যে ২০১৫ সালে সারা হাউজিংয়ের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমানের মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে নিজ খরচে চতুর্থ তলার কাজ করেন। ষষ্ঠ তলারও আংশিক কাজ করেন। এতে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হয়। পুরো টাকা সারা হাউজিংয়ের দিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এর অর্ধেকও তারা পরিশোধ করেনি। তাছাড়া দ্বিতীয় তলার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
আব্দুল হক বলেন, আমি আইনের আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে সারা হাউজিং কর্তৃপক্ষের ভাগনে নুরুল আমিন ও সারা হাউজিংয়ের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হোল্ডার আনিসুল হক খান তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার ও আমার পরিবারের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। মিথ্যা মামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অব্যাহতভাবে অন্যায় ও অপরাধ করে আসছে।
দীর্ঘ দিনের সৌদি প্রবাসী আব্দুল হকের অভিযোগ, তার ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেওয়ায় আইনের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন সময় আদালত তার পক্ষে রায় দিয়েছেন। তবে সারা হাউজিং কর্তৃপক্ষ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে তার সঙ্গে প্রতারণা করেই যাচ্ছে। আদালতের স্ট্যাটাস কো থাকলেও তারা পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছে। তাকে মানসিকভাবে হেয় করতে চট্টগ্রাম আদালতে একটি মিথ্যা মামলার দায়ের করা হয়েছে।
আব্দুল হক বলেন, ২০১৮ সালে আরবিট্রেশন বোর্ড সালিশি কার্যধারা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সারা হাউজিংয়ের কাউকে ভবনে প্রবেশ এবং তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম তলায় কোনো ধরনের না করার জন্য নির্দেশ দেয়। তবে সারা হাউজিং দিব্যি কাজ করে যাচ্ছে। ওই বোর্ড সালিশি রোয়েদাদ ঘোষণা করে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা জমির মালিককে বুঝিয়ে দিতে বলে ৪৫ দিনের মধ্যে। এছাড়া ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রতি ফ্ল্যাটের ভাড়া হিসেব আরও ২৮ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। সে টাকা না পেলে আমি মানি জারি মামলা দায়ের করি। বিপরীতে সারা হাউজিং আদালতে মিস কেস করলে টাকার ১০ শতাংশ জমা করে শুনানি করার আদেশ দেন। ওই আদেশের নকল কপি নিয়ে হাইকোর্টে আমার মানি জারি মামলা ছয় মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করানো হয়।
সারা হাউজিংয়ের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের দীর্ঘ বিবরণ তুলে ধরেন আব্দুল হক। সবকিছু তার পক্ষে থাকলেও সারা হাউজিং তাকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে, বরং হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, এমনকি মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী, দুদক চেয়ারম্যান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারমান, পুলিশ প্রধান, র্যাব মহাপরিচালক, ডিএমপি পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন দফতরে একাধিক অভিযো পাঠিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে আব্দুল হক বলেন, আমি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, অসুখে আক্রান্ত। আমি আমার মেয়ে সন্তানদের নিয়ে সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তার মধ্যে বসবাস করছি। আমার জীবনের সঞ্চিত অর্থে কেনা শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করার জন্য একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য আপনার কাছে বিনীতভাবে আবেদন করছি।