কারাগার থেকে কয়েদি নিখোঁজ: ৭ দিনেও মেলেনি ক্লু
১৩ আগস্ট ২০২০ ১৬:৩৯
ঢাকা: কারাগারের ভেতরে চিরুনি সার্চ দিয়েও খোঁজ মেলেনি কাশিমপুর কারাগারের কয়েদি আবু বকর সিদ্দিকের। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কয়েদি নিখোঁজের ঘটনায় বরখাস্ত করা হয় কারাগার সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। বিষয়টি জানানো হয় গাজীপুর ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে। এরপরও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির কোনো ক্লু মিলছে না।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবু বকর সিদ্দিক কারাগার থেকে নিখোঁজের পর এখনও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। প্রথমে কারা অধিদফতর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন থেকে একজন করে প্রতিনিধি যুক্ত হয়। প্রতিবেদন দেওয়ার আজকেই শেষ দিন হলেও অন গ্রাউন্ডে এখনও সবাই কাজ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তদন্তে কী পাওয়া যায় তা বৈঠকে বসলে জানা যাবে। আজকে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’
গত ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় লকাপের আগে গণনায় আবু বকরকে পাওয়া যায়নি। ওইরাতে সারারাত খোজাঁখুজি করেও মেলেনি কাশিমপুর-২ কারাগারে থাকা কয়েদি আবু বকর সিদ্দিকের।
শুক্রবার (৭ আগস্ট) কারা মহাপরিদর্শক সারাবাংলাকে বলেছিলেন, আবু বকরের খোঁজ না মেলায় সারারাত কারাগারের ভেতরে তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে। চিরুনি সার্চ দিয়েও আসামিকে না মেলায় পুলিশকে জানানো হয়। এ কয়েদি এর আগেও একবার নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে একদিন পর সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে তাকে পাওয়া যায়।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, আবু বকর সিদ্দিক ২০১১ সালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুর কারাগারে এসেছিলেন ফাঁসির আসামি হিসেবে। ২০১২ সালের ২৭ জুলাই আপিলে তার সাজা সংশোধন করে তাকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। তার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার আবাদ চন্ডীপুরে।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) সাতক্ষীরা শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, নাজমুল হুদা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবু বকর সিদ্দিক কারাগার থেকে নিখোঁজের পরে শ্যামনগর চন্ডীপুরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এসেছিল। নজরদারি অব্যাহত আছে। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা কেউ কিছু বলতে পারেনি।’
অন্যদিকে গাজীপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, ঘটনার পরদিন থেকেই পুলিশ কাজ করছে। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে কারাগার থেকে আবু বকর সিদ্দিক পালিয়েছে নাকি কারাগারের ভেতরেই আত্মগোপন করে আছে এখনও তার কোনো ক্লু মেলেনি।
সবচেয়ে হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে একজন বন্দি নিখোঁজ হয়ে গেল। কোথায় গেলো সাতদিনেও তার কিছু আলামত মিলল না। নিরাপত্তার জন্য ভবিষ্যতে এর কেমন প্রভাব পড়তে পারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অপরাধবিজ্ঞানী ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘এটি মারাত্মক ধরনের সংকেত দেয়। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হওয়া দরকার। নিরাপত্তার জন্য এ ধরনের ঘটনা মারাত্মক হুমকি। যে ব্যক্তি হারিয়েছে, তিনি একজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। একই কারাগারে ফাঁসির আসামি ও দুর্ধস্ব জঙ্গিরাও রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই আসামিকে পাওয়া না গেলে সাধারণ বন্দিরাও ভালো থাকতে পারবেন না। ঘুরতে পারবেন না, একটু স্বাধীনভাবে সময় কাটাতে পারবেন না। সকল বন্দির ওপর সবসময় কড়া নজরদারি থাকবে। এমনকি কেউ কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারবেন না।’