‘সিনহা হত্যা নিয়ে ২ বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চলছে’
১৪ আগস্ট ২০২০ ০১:৪৮
ঢাকা: টেকনাফের মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহার নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি মনে করছে, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ এই ঘটনাটি দুই বাহিনীর মধ্যেকার সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। দুই বাহিনীই অতীতের মতো দেশের সেবায় একযোগে কাজ করে যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখা থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, গত ৩১ জুলাই কক্সবাজার জেলার টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার বিষয়টি একটি অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা। এ ঘটনায় সমগ্র দেশবাসীর মতো বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত। এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইনি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মামলা রুজু হয়েছে এবং মামলা তদন্তাধীন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে তার জন্য ব্যক্তিই দায়ী থাকবেন, প্রতিষ্ঠান দায় নেবে না।
ওই যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ের বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলছে, এ ঘটনার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সর্বাত্মক আইনি ও প্রশাসনিক সহযোগিতায় দুই বাহিনীর যৌথ উদ্যোগ তাদের আশান্বিত করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অ্যাসোসিয়েশন বিশ্বাস করে, আগের মতো বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যেকার বিদ্যমান আস্থা, বিশ্বাস এবং আন্তরিক ও শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভবিষ্যতে তা আরও দৃঢ় ও সংহত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গভীর বিস্ময় ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে— এ ঘটনাকে উপজীব্য করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানামুখী অপপ্রচার চালিয়ে চলমান আইনি কার্যক্রমকে প্রভাবিত ও বাধাগ্রস্ত করার জন্য তৎপর রয়েছে। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পেশাদার বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর এ অপচেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ অশুভ চক্রের এ ধরনের ঢালাও নেতিবাচক প্রচার প্রচারণা সত্ত্বেও তাদের মনোবল অটুট রেখে তারা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবেন। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চায়, ব্যক্তির কোনো অপকর্মের দায় বাংলাদেশ পুলিশ বহন করে না। বাংলাদেশ পুলিশ অপরাধীকে কঠোর শাস্তি প্রদানে সবসময় সর্বাত্মক আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের ২ লাখেরও বেশি পুলিশ সদস্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা ও দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে পুলিশ ও সেনাবাহিনী দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির আবহে একযোগে কাজ করে দেশ ও জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, অতীতের ধারাবাহিকতায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামী দিনগুলিতেও দেশ ও মানুষের সেবায় একযোগে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবে।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের আগামী দিনের পথ রচিত হবে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহযোগিতায়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সমবেত অংশগ্রহণ ও নতুন প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা একযোগে দেশ ও মানুষের কল্যাণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব। অতীতের মতো বর্তমান সময়েও স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং জনবান্ধব পুলিশি কার্যক্রম নিশ্চিত করতে এ দেশের মানুষ সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সুশীল সমাজ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সর্বসাধারণের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মেজর (অব.) সিনহা মেজর সিনহা সিনহা হত্যা