Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবিধানবিরোধী: মির্জা ফখরুল


১৪ আগস্ট ২০২০ ১৫:০৭

ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং এ আইনের ‘অপপ্রয়োগে’র নানা চিত্র তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা  শুরু থেকেই বলে এসেছি, এই আইন কালো আইন। এই আইন সংবিধানবিরোধী এবং এই আইন জনগণের কণ্ঠ রোধ করার জন্য সরকারের হাতিয়ার। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার  জন্য এই আইন করেছে।’

শুক্রবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, আপনাদের সামনে বিএনপির পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা হরণের সরকারি নীল নকশার চিত্র তুলে ধরতে চাই।

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের গর্বের ও অহংকারের বিষয়। বর্তমান সরকার প্রতিনিয়ত আমাদের সেই অর্জন, আমাদের গর্বের, অহংকারের গৌরবের স্বাধীনতার চেতনা এবং সংবিধানের পবিত্রতাকে লঙ্ঘন করছে, অপমান করছে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ মানুষের চিন্তা-চেতনা, মতপ্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই মৌলিক অধিকার, চিন্তা চেতনার অধিকার, মতপ্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীনতাকে বৈষম্যমূলকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অপমান করা হচ্ছে।’

মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকারে’র উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। প্রায় সবগুলো মামলার কমন অভিযোগ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতপ্রকাশের জন্য ‘তথাকথিত’ সম্মানহানি বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধ। এসব অভিযোগ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরকারি দলের লুটেরাদের বিরদ্ধে কথা বললে, রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে, সরকারের সমালোচনা করলে মামলা করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

‘মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠ রুদ্ধ। বিবেকের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত, যা সংবিধান লঙ্ঘনের সামিল,’— বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে  ১২ জন সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়েছেন। এরই মধ্যে সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই কালো আইন বাতিলের দাবি তুলেছে।’

মির্জা ফখরুল জানান, ২০২০ সালের ২২ জুন পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১০৮টি। এসব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন, আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন। এই হিসাবে প্রায় ২৫ ভাগ আসামিই হলেন সাংবাদিক।

তিনি বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের তথ্য মতে বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ, অনেক মামলার খবরই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় না। তাই মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তার খোঁজ পায় না। ফলে তাদের সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি মাত্র সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আছে ঢাকায়। ডিজিটাল এবং তার আগের আইসিটি আইনের সব মামলার হিসাব আছে সেখানে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে মোট ৩২৭টি। জানুয়ারি মাসে মোট মামলা হয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে থানায় ৪১টি এবং আদালতে ৪৫টি। ফেব্রুয়ারি মাসের ১১৯টি মামলার মধ্যে থানায় ৯৫টি, আদালতে ৩৪টি। আর মার্চ মাসে মামলা হয়েছে ১২২টি। এর মধ্যে থানায় ৭৫টি ও আদালতে ৩৭টি।’

তিনি বলেন, ‘এই আইনে হয়রানির অন্যতম একটি দিক হলো, সারা বাংলাদেশে একটি মাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল, যা ঢাকায় অবস্থিত। এই আইনের অধীনে কোনো আপিল ট্রাইব্যুনাল এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলের কোনো ব্যক্তি বা সাংবাদিক ফেসবুকে সরকারের লুটপাটের বিরদ্ধে কোনো সমালোচনা করলে তার বিরদ্ধে মামলা সংশ্লিষ্ট থানায় করলেও তার বিচার হবে ঢাকায় অবস্থিত একমাত্র সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনোর মামলার মূল অভিযোগ হলো, ‘ব্যক্তির মানহানি, আক্রমণাত্মক মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন কিংবা রাষ্ট্রের তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ করা, ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা। অথচ এই সরকারের মন্ত্রী-এমপি-আমলা-পুলিশের লুটপাট কিভাবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করছে? আমাদের গর্বের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বা সুনাম আজ বিশ্বদরবারে দুর্নীতির সূচকের তলানিতে। এ সরকারের নেতাকর্মীদের করোনা সার্টিফিকেট বিক্রির কারণে ইতালিতে বাংলাদেশিদের ঢুকতে দেওয়া হয় না, নিউইয়র্ক টাইমসে নেতিবাচক প্রবন্ধ হয় বাংলাদেশকে নিয়ে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শীর্ষ দেশগুলোতে বাংলাদেশ উঠে আসে।’

ফাইল ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্স মির্জা ফখরুল ইসলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর