জেলে বঙ্গবন্ধু মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলেন ভয় নেই: মতিয়া
১৫ আগস্ট ২০২০ ১০:৩৫
ঢাকা: ছয় দফার আন্দোলন পরবর্তী সময়ে জেলে মতিয়া চৌধুরীর মাথায় হাত রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই অনুভূতি বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। মতিয়া বলেন, “আমি বসে আছি জেলারের সামনাসামনি। পেছনে মাথায় একটি হাত। আমি পেছনে তাকাকেই দেখলাম সেই মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন। আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন— ‘মতিয়া এসেছ এখানে। ভয় নেই, ভয় নেই।’ এটা যে আমার জন্য কী ছিল আমি বুঝিয়ে বলতে পারবো না।”
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) রাতে শোক দিবস উপলক্ষ্যে ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশ ও কিছু অজানা কথা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্তের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা নূহ-উল-আলম লেনিন, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি। আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, তখন আমি ছাত্রলীগের সঙ্গে ছিলাম না। তখন আমি ছাত্র ইউনিয়ন করি। ছয় দফায় ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থন দিয়েছিল। এটা করতে গিয়ে ছাত্র ইউনিয়নে বিভাজন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিয়ে জেলে গেলেন। ৬৭ সালে হরতাল করে আমি বাসায় ফিরছি। বাসায় ফেরার পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে বললো, আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। তারপর যখন জেলে গেলাম, জেলারের রুমে সবকিছুর একটি হিসাব নিকাশ, ঘড়ি আছে কি না… এটা আছে কি না, ওটা আছে কি না, এগুলোর হিসাব লিপিবদ্ধ করা হচ্ছিল, যদিও এক কাপড়ে এরেস্ট হয়েছি। আইডেন্টিফিকেশন মার্ক, গায়ে দাগ আছে কিনা, এগুলো করা হচ্ছে। আমি বসে আছি জেলারের সামনাসামনি। পেছনে মাথায় একটি হাত। আমি পেছনে তাকাকেই দেখলাম সেই মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন। আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন- ‘মতিয়া এসেছ এখানে। ভয় নেই, ভয় নেই।’ এটা যে আমার জন্য কী ছিল আমি বুঝিয়ে বলতে পারবোনা। পরে ওই জেল থেকে বঙ্গবন্ধুকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেল। আমাদের নিয়ে যাওয়া হল ময়মনসিংহ জেলে।
মতিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু রাতের আধারে রাজনীতি করতেন না। দিনের আলোতে রাজনীতি করতেন। অসংখ্য মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করতেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় জেলে ছিলেন। তখন বেগম মুজিব আওয়ামী লীগের কর্মী, ছাত্রলীগের কর্মী, দেশের জনগণকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হয়ে পার্টিকে গুছিয়েছেন।
স্মৃতিচারণ করে মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের ওয়ার্কশপ হচ্ছিলো। আমি বাকশালের সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বার ছিলাম। রাত ৮ টা সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত মিটিং চলছিলো। পরে সিদ্দিক বাজারের বাসায় যাই। ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠবো উঠবো করছি। আমাদের বাসার সহকারী দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললেন শেখ সাহেবকে মেরে ফেলেছে। এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছিল। তখন গোপনে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। গ্রেফতার এড়াতে বাসা থেকে নিজেকে আড়াল করি।… তখন ৩২ নম্বর বাসার দিকে যাওয়া অঘোষিত নিষিদ্ধ ছিল। মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যনেক্স ভবন থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত গেলাম। সেখানে আরও কয়েকজন যুক্ত হলেন। কলাবাগান যাওয়ার পর আর যেতে দেয়নি। ফিরে আসার পথেই শুনলাম চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। পরে আমাকে ও সাজেদা আপাকেও গ্রেফতার করা হয়।