Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংকট নিরসন, চট্টগ্রাম থেকে ৫ পত্রিকার প্রকাশনা ফের শুরু


১৫ আগস্ট ২০২০ ১৬:১০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দৈনিক আজাদী সম্পাদকের বাসা ঘেরাওয়ের জেরে ১২ দিন বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামের পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা আবারও শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) ওই কর্মসূচি পালনের পর পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপর আজাদীতে কর্মরত সাংবাদিকরা সিইউজে থেকে তাদের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিলে পত্রিকা প্রকাশে রাজি হন সম্পাদক।

আজাদীতে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবনে গিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পত্রিকার প্রকাশনা আবারও চালুর অনুরোধ করেন। তবে বিএফইউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলোচনার মধ্য দিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।

সম্পাদকের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি, আকস্মিকভাবে পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাওয়া, পত্রিকা চালুর দাবিতে সিইউজে এবং আজাদীতে কর্মরতদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পত্রিকা বন্ধে মালিকদের অনড় অবস্থান নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে নানামুখী আলোচনা ছিল চট্টগ্রামে। স্মরণকালের মধ্যে পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা নিয়ে এমন টানাপড়েন আর দেখা যায়নি বলেও মত আসে বিভিন্ন মহল থেকে। পত্রিকা চালুর অনুরোধ নিয়ে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবনে যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসের দাবিতে গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে সিইউজে। পরদিন থেকে পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা একযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। চারদিনের ঈদুল আজহার ছুটি বাদে ১২ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) থেকে আবারও পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়েছে। এর আগে শুক্রবার পত্রিকাগুলোর সাংবাদিক-কর্মচারিরা কাজে যোগ দেন।

পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশনা বন্ধ রাখার কৈফিয়ত দিয়েছে আজাদী কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ২৯ জুলাই ২০২০ তারিখে দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদক এম এ মালেকের বাসভবনের সামনে অনভিপ্রেত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত শীর্ষস্থানীয় দৈনিকসমূহ ৩০ জুলাই থেকে তাদের প্রকাশনা বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে এই জটিলতার সম্মানজনক সমাধান হওয়ায় আজ ১৫ আগস্ট ২০২০ হতে চিটাগাং নিউজপেপার্স অ্যালায়েন্স পুনরায় পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।’

‘সিইউজের সদস্যপদ প্রত্যাহার করলেন আজাদীর সাংবাদিকরা’- লাল কালিতে প্রকাশিত এই শিরোনামের আরেক সংবাদে বলা হয়েছে, গত ১২ আগস্ট দৈনিক আজাদীর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় দৈনিক আজাদীর সাংবাদিকরা একযোগে সিইউজের সদস্যপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সভায় তারা বলেন, নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদান করার পরও গত ২৯ জুলাই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র ‘দৈনিক আজাদী সম্পাদকের বাসভবন ঘেরাওয়ের’ মতো কর্মসূচি পালন করে সিইউজে। এই কর্মসূচিকে ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ কর্মসূচি’ আখ্যায়িত করে দৈনিক আজাদীর সাংবাদিকরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। দৈনিক আজাদীর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো আবেদন না থাকার পরও সিইউজে এমন একটি হটকারি কর্মসূচি পালন করে। তারা এই কর্মসূচিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতমূলক’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

গত ১২ আগস্ট এই সভার পরদিন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, আজাদীতে কর্মরত সাংবাদিকরা সিইউজে থেকে তাদের সদস্যপদ প্রত্যাহারের বিষয়টি লিখিত দেওয়ায় তিনি পত্রিকা প্রকাশে রাজি হয়েছেন। ১৫ আগস্ট থেকে পত্রিকা পুনরায় প্রকাশের আভাসও তিনি দিয়েছিলেন।

এরপর শুক্রবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব শাবান মাহমুদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজাদী সম্পাদকের বাসায় যান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন- বিএফইউজের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী এবং সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম।

ওই পত্রিকায় ‘দৈনিক আজাদী সম্পাদকের সাথে বিএফইউজে নেতৃবৃন্দের বৈঠক’ শিরোনামে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, ‘বৈঠকে সাংবাদিকদের অধিকার ও সংবাদপত্র প্রকাশনায় পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় গুরুত্ব পায়। উভয় পক্ষের সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন কর্তৃক গত ২৯ জুলাই দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ চট্টগ্রামের সংবাদপত্র প্রকাশনায় ইউনিয়নের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বৃহত্তর আঙ্গিকে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের স্বার্থ রক্ষায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সাথে তিনি সব ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামের পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার জন্যও চিটাগাং নিউজপেপার্স অ্যালায়েন্সকে অনুরোধ জানান।’

বৈঠকের বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় জানতে চাইলে বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংবাদপত্র মালিকদের প্রতিনিধি হিসেবে জনাব এম এ মালেকের সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আলোচনার প্রেক্ষিতে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে পত্রিকা প্রকাশে সমঝোতা হয়েছে।’

বিএফইউজে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক এবং পত্রিকার প্রকাশনা নিয়ে জানতে চাইলে দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত আমি তিনদিন আগে নিয়েছি। আজাদীর সাংবাদিকরা সিইউজে থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই আমি পত্রিকা প্রকাশে রাজি হই। এরপর বিএফইউজে নেতারা আমাকে ফোন করে বলেন, তারা আমার বাসায় আলোচনার জন্য আসতে চান। আমি বলি- আলোচনার তো কিছু নেই, এই ব্যাপারে তো সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। তখন উনারা বলেন যে- চা খেতে আমার বাসায় আসবেন। আমি ভদ্রলোক মানুষ। কেউ চা খেতে বাসায় আসতে চাইলে তো না করতে পারি না। উনারা এসে পত্রিকা বন্ধের বিষয়ে আলাপ শুরু করেন। আমি বলি- এ বিষয়ে তো আপনাদের সঙ্গে আলাপ করার কিছু নেই। আমার পত্রিকার কোনো সাংবাদিক তো আপনাদের সংগঠনের মেম্বার নেই। পরে উনারা সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।’

‘আমি একটা কথা সবসময় বলি- আমার পত্রিকা আজাদীতে যারা কাজ করেন, তাদের সঙ্গে আমার মালিক-কর্মচারির সম্পর্ক নেই। এখানে সবাই আমরা এক পরিবারের মতো। আজাদীতে প্রতিমাসে অবশ্যই ৭-৮ তারিখের মধ্যে বেতন দেওয়া হয়। করোনা নিয়ে সংকটের মধ্যেও আমার পত্রিকায় বেতন বন্ধ নেই। বোনাস অর্ধেক দেওয়া হলেও চলতি মাসের বেতনের অর্ধেক অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। বেতন-ভাতা নিয়ে অন্তঃত আজাদীর সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কেউ অসন্তুষ্ট আছেন, এমন খবর আমার জানা নেই’-বলেন এম এ মালেক।

দৈনিক আজাদীর সঙ্গে বাকি চার পত্রিকার প্রকাশনাও পুনরায় শুরু হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পূর্বকোণ, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ ও পূর্বদেশ। এসব পত্রিকায়ও প্রকাশনা বন্ধ রাখার বিষয়ে আজাদীর মতো ‘অভিন্ন কৈফিয়ত’ দেওয়া হয়েছে।

আজাদী ঘেরাও টপ নিউজ পত্রিকা সম্পাদক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর