‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনের কারণগুলো উন্মোচন করা প্রয়োজন’
১৫ আগস্ট ২০২০ ২১:১৫
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পেছনের রাজনৈতিক, সামরিক ও আন্তর্জাতিক কারণগুলো উন্মোচন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন এ সময়ের তরুণ রাজনীতিবিদরা। তাছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে এবং সেগুলো জাতির সামনে উন্মোচন না করলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলেও মনে করেন।
শনিবার (১৫ আগস্ট) সারাবাংলা ফোকাস অনুষ্ঠানে ‘১৫ আগস্ট’ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অতিথি ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হাসান ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানবেন্দ্র দেব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা.নেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এম এ কে জিলানী।
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, ‘আগস্ট একটি শোকের মাস। এই আগস্ট মাসকে সব সময় বিপদগামীরা বেঁছে নিয়েছেন। ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিশ্বনেতারা বলেছিলেন, বাঙালিকে আর বিশ্বাস করা যায় না। ১৭ জন পরিবারের সদস্যকে সেদিন হত্যা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী তখন মানবেতর জীবনযাপন করেন। কেউ তখন তাকে আশ্রয় দেয়নি। যে রাজনীতি সমাজ ও দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনে সেটা আমাদের করা উচিত না। ছোট্ট শিশু রাসেলকেও সেদিন তারা নির্মমভাবে হত্যা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তরুণ রাজনীতিবিদ। আমরা যদি জাতির কাছে সঠিক তথ্য তুলে না ধরি তাহলে আমরা ছোট হয়ে থাকব। জাতির কাছে আমাদের দায় থাকবে। সত্য ঘটনা মিথ্যাভাবে বললে দল থেকে হয়তো বাহবা পাওয়া যাবে তবে সেটা ক্ষণস্থায়ী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার ছিল। কিছুদিন আগে ফাঁসি কার্যকর হওয়া ক্যাপ্টেন মাজেদ তার জবানবন্দিতে সেসব কথা বলেছেন। আমরা এটাকে মিথ্যা বললে সেটা ভুল হবে। পাকিস্তানের নেতৃত্বে জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। হত্যাকারীদের বিচার না করার জন্য ৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর একটি আইন করেন। ৭৯ সালে ক্ষমতায় এসে জিয়া সেটি অনুমোদন দেন। এমনকি ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেনি।’
ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা একটি নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। ২০০৪ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে তারেক রহমান যান এবং শ্রদ্ধা জানান। আমরা সবসময় শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের রাজনীতি করতে চায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে সামরিক ও রাজনৈতিক কারণ ছিল। এটার পেছনের কারণ কেউ উত্ঘাটন করতে চায় না। ফলে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আর রাজনৈতিক কারণ উত্ঘাটন করতে গেলে তাদের (আওয়ামী লীগের) দেওলিয়াত্ব প্রমাণিত হবে। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পেছনে চারটি কারণ সুস্পষ্ট। প্রথমত ১৯৭২ সালে রক্ষী বাহিনী গঠন, এরপর ৭৫ সালে বাকশাল গঠন, এরপর সেনাবাহিনীর বিকল্প বাহিনী গঠন এবং শেষ ৭২-৭৫ সালে জাসদ যে হত্যা কায়েম করেছিল সেটা এবং ইনু গংদের আওয়ামী সরকার উৎখাতের চেষ্টা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব কারণে মুজিবুর রহমানকে হত্যার পটভূমি তৈরি হয়েছিল। মুজিব হত্যার বিচারকে সাধুবাদ জানায়। তবে হত্যার পেছনের রাজনৈতিক কারণগুলো তুলে না ধরলে জাতি হিসেবে আমরা আরও ক্ষতির সম্মুখিন হবো।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানবেন্দ্র দেব বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের পরে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা আমাদের অনেক পেছনের ফিরিয়ে দেয়। যেখান থেকে রাজনীতি শুরু হয় সেখানে আবার পাঠানো হয়। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরও ২০২০ সালে আমরা কিছু নিদর্শন দেখতে পায়। সমাজে দুর্নীতি, লুটপাট হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক যে রাজনীতি সেটা উত্ঘাটন জরুরি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে যারা জড়িত তাদের বিচার হচ্ছে এটাকে সাধুবাদ জানায়। কিন্তু এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিল এবং আন্তর্জাতিক যে চক্রান্ত ছিল সেটারও বিচার হওয়া জরুরি। ফলশ্রুতিতে এখন আমরা দেখছি জাতীয় শোক দিবস থেকে শাহাদাত্ বার্ষিকী হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিহাস পরিবর্তনের সুযোগ নেই। খন্দকার মোস্তাক এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এটা নিয়ে কারও কোনো দিধা নেই। জিয়া থেকে এরশাদ সবাই এই খুনিদের লালন পালন করেছে। হত্যার রাজনীতি আছে সেটা এখনো চলছে। আওয়ামী লীগ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত শুধু তাদের বিচার করছেন। কিন্ত এটার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তথা যেসব গোষ্টিও জড়িত তাদেরও বিচার হওয়া দরকার।’