জাসদ নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার দায় আ.লীগের ওপর বর্তায়: ইনু
১৬ আগস্ট ২০২০ ০০:৫৭
ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট জাসদ তৈরি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডের দায় দলটি এড়াতে পারে না বলে বিভিন্ন আলোচনায় প্রায়ই উঠে আসে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের রাজনৈতিক দায় জাসদ এড়াতে পারে কি না? বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরিতে জাসদের ভূমিকার সত্যতা কতটুকু? মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে জাসদ কী করতে পেরেছিল?- এসব নিয়ে সম্প্রতি সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তার দাবি, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দায় সরাসরি আওয়ামী লীগের ওপরই বর্তায়। রাজনৈতিক কারণে জাসদ প্রকাশ্যে ওই সময়ের আওয়ামী লীগ সরকারের আদর্শগত বিরোধিতা করলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে দলটির কোনো দায় নেই। বরং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্য দলটি প্রতিবাদ দেখিয়েছে। যারা জাসদের দিকে আঙ্গুল তোলার চেষ্টা করে তারা মূলত আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ঘাঁপটি মেরে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি, চক্রান্তাকরীদেরকে আড়াল করতে চায় ও বাঁচাতে চায়।’
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘদিন পরে দায়মুক্তির বিধান বাতিল করে প্রকাশ্য আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিচারের তথ্য উন্মোচিত হয়েছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের কতিপয় স্নেহভাজন সামরিক অফিসার ঘটিয়েছে। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও পতনের দায় সরাসরি আওয়ামী লীগের ওপরই বর্তায়। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ চক্রান্ত, কোন্দল ও ষড়যন্ত্রের ফসল হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বর্ণচোরা পাকিস্তানপন্থী ও সাম্প্রদায়িক চক্র, ৭১-এ পরাজিত পাকিস্তান ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ শক্তি এবং রাজকার-আলবদর গোষ্ঠীর উস্কানিতে এই দুষ্কর্ম সংগঠিত হয়। জাসদের দিকে এ নিয়ে আঙ্গুল তুলে লাভ নেই।’
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ‘রক্তাক্ত বিরোধিতার’ দায় এড়াতে পারে না জাসদ
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পতনের জন্য জাসদ কোনভাবেই দায়ী নয়। জাসদ প্রকাশ্য রাজনৈতিক দল, প্রকাশ্যেই তারা রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে। জাসদ প্রকাশ্যেই রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু সরকারের আদর্শগত বিরোধিতা করেছে- এটা সবাই জানে। কিন্তু অবৈধ চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু সরকারের পতনের কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা জাসদের কোনোকালেই ছিল না।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জাসদ বিপ্লবে বিশ্বাস করে, অভ্যুত্থানে বিশ্বাস করে; বিপ্লব, অভ্যুত্থান ও ষড়যন্ত্র এক না। জাসদ চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। সেজন্য বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার ভেতর তৎকালীন নিষিদ্ধ থাকা জাসদের নেতারা খুনি খন্দকার মোশতাক সরকারের সামরিক শাসনের বিরোধিতা করি। এছাড়া তার সামরিক শাসন উচ্ছেদ এবং তার পতনের জন্য আন্দোলনের সিদ্ধান্তও জাসদ নেয়। আমাদের দল পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে প্রতিবাদ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এতে খন্দকার মোশতাক ক্ষেপে গিয়ে ৮৩ দিনের শাসনামলে জাসদের কর্মীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং অনেককে গ্রেফতার করে। কারাগারে জাসদের শীর্ষ নেতারা বন্দি থাকলেও খন্দকার মোশতাকের আমলে জাসদের কোনো নেতাদের মুক্তি দেয়নি। বরং খন্দকার মোশতাক অনেক রাজাকার-আলবদরকে মুক্তি দিয়েছে।’
জাসদ সভাপতি বলেন, ‘জাসদ নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু সরকারের বিকল্প ও অবৈধ ক্ষমতা দখলের সামরিক শাসনকে বৈধ মনে করেনি। কোনো সামরিক সরকারকেই জাসদ বৈধ মনে করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। খন্দকার মোশতাক, জিয়া ও এরশাদের সামরিক সরকারগুলোর ধারবাহিক বিরোধিতা আমরা করেছি।’