‘জিয়া ইনডেমিনিটি দিয়ে প্রমাণ করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন’
১৭ আগস্ট ২০২০ ০০:৪৩
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিলেন বলে ফের মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িতদের দায়মুক্তি দেওয়া, খুনিদের ‘পুরস্কৃত করা’সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান নিজেই এর প্রমাণ দিয়ে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রোববার (১৬ আগস্ট) বিকেলে জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এই স্মরণসভায় দলের সভাপতি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন।
আরও পড়ুন- ‘অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে’
বঙ্গব্ন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮০ সালে লন্ডনে হাউজ অব কমন্স সদস্য স্যার টমাস ইউলিয়াম কিউসি ও শ্যন ম্যাকব্রাইটকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তে গঠিত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিশনকে এ দেশে আসার ভিসা না দিয়ে এবং খুনিদের ইনডেমনিটির মাধ্যমে দায়মুক্তি প্রদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দেওয়ার মাধ্যমে জিয়াউর রহমান প্রমাণ করেছিলেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডে জাড়িত ছিলেন। শুধু তাই নয়, বিবিসিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক এবং রশিদও জিয়ার জড়িত থাকার উল্লেখ করেছিল।
অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে লেখা পাকিস্তানের কর্নেল বেগের (পরবর্তী সময়ে সেনাপ্রধান) একটি চিঠি পড়ে শোনান জাহাঙ্গীর কবির নানক। সেই চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন,‘ চিঠিতে জিয়াকে নতুন কাজ দেওয়ার যে কথা বলা হয়, সেটা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের অ্যাসাইনমেন্ট ছিল কি?’
খন্দকার মোশতাকের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বেঈমানরা কখনোই ক্ষমতায় থাকতে পারে না। মীর জাফরও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। সিরাজদ্দৌলাকে হত্যা করতে মীর জাফরকে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই মীর জাফর দুই মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ঠিক মোশতাকও পারেনি। মোশতাককে হটিয়ে জিয়াউর রহমানই রাষ্ট্রপতি হয়েছিল। যে নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিল। বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধী আলবদর, রাজাকার, আল-শামসদের জেল থেকে ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী-উপদেষ্টা করে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল এই জিয়াউর রহমান।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পরের সময়কার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির মেয়ে হয়েও নাম-পরিচয় গোপন করে নির্বাসিত রিফিউজি জীবন কাটাতে হয়েছে আমাদের দুই বোনকে। অন্যদিকে খুনিরা বিভিন্ন দূতাবাসে আরাম-আয়েশে জীবন কাটিয়েছে।’
জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া পরবর্তী সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার না করার ইনডেমনিটি দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। আর নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে হত্যাকারী-সন্ত্রাসীদের ইনডেমনিটি দিয়েছিল তার স্ত্রী খালেদা জিয়া।
করোনা মোকাবিলায় প্রশাসন-বাহিনী-দলের প্রশংসা
দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের দায়িত্ববোধের প্রশংসা করে করেনায় শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ আমাদের সব নেতাকর্মী এই করোনাভাইরাসের সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের কাছে গেছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ত্রাণ বিতরণ করেছে। কাজ করতে গিয়ে নেতাকর্মীদের অনেকেই করেনায় আক্রান্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছে, আবার কাজে ছুটে গেছে তাদের মাঝে। অনেক নেতাকর্মী এসময় মৃত্যুবরণ করেছে। আমি মনে করি, যারা মারা গেছে, আমাদের পার্টির থেকে সেই তালিকাটা বের করা দরকার।
দলীয় কার্যালয় থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন। পরে দলীয় নেতাদের মধ্যে বক্তৃতা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফি ও মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। বাসস।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যা শোক দিবস শোক দিবসের অনুষ্ঠান