ঢাকা: করোনাকালে ছাদবাগানে নগরকৃষির গুরুত্ব ও প্রবাসে বাঙ্গালির কৃষিভাবনা বিষয়ে আন্তর্জাতিক নগরকৃষক সম্মেলন-২০২০ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজের আহ্বানে চ্যানেল আই ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ এর ছাদ-কৃষি, প্রবাসে বাঙালির আঙিনা কৃষি প্লাটফরমগুলোর পক্ষ থেকে এই ভার্চুয়াল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) এর মেয়র আতিকুল ইসলাম, এডিবির অবসরপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. পারভেজ ইমদাদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এমন একটি আয়োজন প্রমাণ করে শাইখ সিরাজ এদেশের কৃষিকে দেশের মাটি থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কৃষি বিপ্লবের দেশ হিসেবে পরিচিত হোক বাংলাদেশ। আমাদের দেশের শ্রমিকরা মরুভূমিকে সবুজ করে তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী চান, কোনো মানুষ যেন অভুক্ত না থাকে। দেশের মতো বিদেশেও আমরা শ্রমিকদের ঘরে খাদ্য পৌঁছে দিতে পেরেছি। কৃষির উত্তরণের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষির দুটি দিক আছে। খাদ্য নিরাপত্তা কোনো দেশের অঞ্চলের নয়, এটি বিশ্ব পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ। এখন অনেক দেশে মানুষ না খেয়ে মারা যায়। আমাদের দেশে ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। আমাদের চালের কোনো অভাব নেই। এখন দেশের দরিদ্র মানুষও ভালো খাবার খেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি হবে অর্থ উপার্জনের জন্য। মুনাফার জন্য। জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। সুন্দর একট জীবনের সন্ধান পাবে। আমাদের দেশে জমি খুবই কম। স্বাধীনতার সময় ছিল ২৮ শতাংশ। এখন ১০ শতাংশ। ৭১ সালে খাদ্য হতো ১ কোটি ১০ রাখ টন। এখন হয় ৪ কোটি ৩০ লাখ টন। চাল ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। আলু ১ কোটি ১০ লাখ টন। দরকার ৭০ লাখ টন। ৪০ লাখ টন বেশি।
প্রধানমন্ত্রীর কৃষির প্রতি বিশেষ মনোযোগ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর তিনজন সৎ প্রধানমন্ত্রীর একজন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আমরা নগরকৃষি বিষয়ক একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে দিয়েছি। এক্সপার্ট ও হর্টিকালচারালিস্ট নিয়োগ দেব। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেব। একটি প্রকল্প ইতোমধ্যেই আছে। প্রকল্পটিকে আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জনবল যুক্ত করা হচ্ছে। আমরা কাউন্সিলর ও মেয়রকে যুক্ত করবো বিভিন্ন ওয়ার্ডের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৯ হাজার লোকের বাস। আমাদের জমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ভার্টিকাল এক্সপানশনের চেষ্টা করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে কৃষি উদ্যোগ নিতে হবে। যার যতটুকু সুযোগ আছে।
ড. পারভেজ ইমদাদ বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি উদ্যোক্তা দৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। কৃষি কূটনীতির কথা বলেছেন। এটি আমি সমর্থন করি। কৃষি কূটনীতি তৎপরতা চালানো হলে প্রবাসে যারা আছেন তারা উপকৃত হতে পারবেন। কৃষিক্ষেত্রে পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) বাস্তবায়ন করা হলে কৃষিখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উপকৃত হবেন। সরকার কৃষিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। পিপিপির মাধ্যমে দেশে বিদেশে কৃষির একটি সমন্বয় হতে পারে।
সম্মেলনের মূল পরিকল্পনাকারী শাইখ সিরাজ বলেন, করোনাবিপন্ন পৃথিবীর নতুন স্বাভাবিক সময়ে আমরা। প্রত্যেক সচেতন মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিবর্তিত সময়কে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। যারা প্রকৃতির শক্তিকে কাছ থেকে উপলব্ধি করছেন, ফল ফসলের ভালোবাসায় নিজেকে জড়িয়ে রাখছেন, নিয়মিত মাটির শক্তি উপলব্ধি করছেন বিশ্বাস করি, এই সময়ে তারা অনেক ভালো আছেন। আজ সবুজের সঙ্গে সখ্যতা গড়ার অপরিহার্যতা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি দীর্ঘ পথের গোড়ার দিকে আছি বলে মনে করছি। আজকের এই দিনে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক শক্তির অপরিহার্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। নগরকে তথা পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে প্রত্যেকের নিজস্ব অবস্থান থেকে কৃষি উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। এটি পরিবেশের পুষ্টির জন্য যেমন প্রয়োজন। একইভাবে প্রয়োজন শরীরের নিখাদ পুষ্টির জন্যও।
অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক নগর কৃষক সম্মেলনে পৃথিবীর কয়েকটি শহরে একযোগে নগরকৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন পূর্ব লন্ডনের ইমরান, জার্মানির শিরিন হোসেন, হাসান বাবর, ইংল্যান্ডের আরিফ ইকবাল শাহীন, ইংল্যান্ড থেকে সাঈদ সুমন, জলি দাশ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আহমদ আল নাহিদ, অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদুল হাসান, কানাডার সাইফুল আলম, ফ্রান্সের কামরুন্নাহার ও সাইফুল ইসলাম, ড. হাসিবুর রহমানসহ আরও অনেকে।