জাসদ তৈরি ছিল আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের অংশ: নানক
১৯ আগস্ট ২০২০ ০১:১১
ঢাকা: স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ভেঙে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গড়ে তোলা আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
তিনি বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগের ভেতরে আন্তঃকলহ তৈরি করা হয়েছিল। সেটা ছিল সামাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে বৈজ্ঞানিক ছাত্রলীগ করা এবং তারপর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ তৈরি করা— এসব ছিল আমেরিকার ষড়যন্ত্র।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনায় জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, কিছু কথা আছে যেগুলো এখানে বলা যাবে না। কিন্তু সেসব কথা আবার লেখা যাবে। আমি লিখছি। বই আকারে প্রকাশ হবে। তবে এমন কিছু ঘটনা আছে, যা এখনই প্রকাশ করা যাবে না। আমার মৃত্যুর পর হয়তো এই বই প্রকাশ হবে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার সেই নির্মমতার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনেন নানক। বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে বাংলাদেশটি স্বাধীন হলো, সেই দেশটি কি কোনো সাফ কবলা দলিলের মধ্য দিয়ে স্বাধীন? কোনো প্রেমচুক্তি বা এগ্রিমেন্টের মধ্য দিয়ে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল? না, সেদিন স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল। পৃথিবীর মস্ত বড় এক পরাশক্তির সঙ্গে লড়াই করে ভারতের সহযোগিতা নিয়ে এ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। চীন-মার্কিন পরাশক্তি তখন স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। তারা পাকিস্তানিদের অস্ত্র দিয়েছে। সবশেষ বাংলার মাটিকে পুড়িয়ে লাল করে দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। সেই আমেরিকার কথা কেন আমরা আমলে নেইনি— সেটা তারা মেনে নিতে পারেনি। তারা আমাদের স্বাধীনতাকেই মেনে নিতে পারেনি।
নানক বলেন, একদিকে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আরেকদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ছেড়ে দিতে হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৯০ হাজার সদস্যকে বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে কবর খোঁড়ার পরও তারা তাকে মারতে পারেনি। ওরা আমাদের মুজিবকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এটাই ছিল পাকিস্তানিদের এক বিরাট পরাজয়। তারা মানতে পারে নাই।
‘আরেক দিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, জামায়াত, মুসলিম লীগরা পরাজিত হলো— তারা কি চুপ করে বসে ছিল? না, তারা শক্তি সঞ্চয় করেছে। সেই শক্তি সঞ্চয় করে তারা ওঁৎ পেতে থেকেছে। সেই শক্তির বিরুদ্ধে আমরা আমাদের নেতাকে, মহান শিক্ষককে নিরাপত্তা দিতে পারিনি। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে,’— বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।
জাতির পিতার বাসভবনের সেদিনের নিরাপত্তার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি স্টাডি করেছি। যেমন— সেদিন তার সরকারি অফিস ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ২৫ জন সেনাসদস্য। বাকি সব পুলিশ বাহিনীর সদস্য। মোট ২০০ জন দায়িত্বে ছিলেন। কী কারণে ওখানে নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি? যে স্বল্পসংখ্যক সদস্য ওখানে দায়িত্বে ছিলেন, তাদের চৌদ্দ পুরুষের ইতিহাস কেউ কোনোদিন খোঁজেননি। তারা কোন পরিবার থেকে এসেছে, তাদের অরিজিন কী— এগুলো কেউ সন্ধান করেনি।
কিছু উশৃঙ্খল সামরিক সৈনিক বেপরোয়া হয়ে ঝোঁকের মাথায় জাতির পিতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়— অনেকের এমন মনোভাবের সঙ্গে একমত নন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, আমি এত সহজভাবে দেখি না। আপনাদের মনে রাখতে হবে— আমার নেত্রী, আমাদের নেত্রী, আমাদের কেন্দ্রবিন্দু, যিনি ১২ বছর ধরে দেশ চালাচ্ছেন, তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শক্র কারা? সেই শত্রুর শক্তি কী? সেই শত্রু কোন পথে হাঁটছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।
নানক বলেন, কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। ৫০ বছরের শাসনকালে তাকে সর্বমোট ৬৩৮ বার হত্যা করতে চেষ্টা চালিয়েও ষড়যন্ত্রকারী, সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী সফল হয়নি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো— আমরা এত বড় যুদ্ধ করলাম, এত বড় লড়াই করলাম, সপ্তম নৌ বহরকে পর্যন্ত ফেরত পাঠালাম; অথচ খাদ্য সংকট তৈরি করতে আমার চালের জাহাজ ডুবিয়ে দিলো যারা, যারা মানুষকে না খাইয়ে মেরে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ তৈরির চেষ্টা করলো, তাদের সম্পর্কে আমরা সতর্ক হলাম না!
তিনি আরও বলেন, সেদিন আওয়ামী লীগের ভেতরে ছিল অন্তঃকলহ। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্তঃকলহ তৈরি করা হয়েছিল। সেটা ছিল সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের অংশ। আরেকদিকে স্বাধীনতা উত্তর সময়ে বৈজ্ঞানিক ছাত্রলীগ তৈরি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) তৈরি— এগুলোও ছিল আমেরিকার ষড়যন্ত্র। লাখ লাখ মানুষের ভিড় হতো তাদের প্রোগ্রামে। সবাই মনে করত এই লোক সব জাসদের। কিন্তু ওরা কারা? কারা ওই পল্টনে জমায়েত করত?
নানকের দাবি— জাসদের কর্মসূচিতে যে জমায়েত, তা ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের সমাবেশ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছিল, সেই রাজাকার-আলবদর-আলশামস যারা ঢাকায় ছিল, তারা যেত ওইসব জায়গায়। যারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা-গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছিল, তারা যেত ওইসব জায়গায়। তারা ওইসব জায়গায় গিয়ে তৃপ্তি পেত। কাজেই ষড়যন্ত্র ছিল প্রকট।
ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে নানক বলেন, আমাদের পরিস্থিতি জানতে হবে। পত্রিকা পড়তে হবে। নেত্রী শেখ হাসিনার দল করি, নেত্রী শেখ হাসিনা কী বললেন, সেই বক্তৃতা শুনতে হবে। সেই বক্তৃতার মাঝে কী ঘ্রাণ আছে, কী নির্দেশনা আছে, কী ইঙ্গিত আছে— সেগুলো বোঝা আমাদের কর্তব্য। আজও শেখ হাসিনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু শত্রুর মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সে কারণেই আগুন সন্ত্রাস, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, তাণ্ডব, জ্বালাও-পোড়াও সবকিছু আমাদের দেখতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। ওরা কি ছাড়বে আমাদের? ওরা কি চুপ করে বসে আছে? ওদের কাছে টাকা আছে। ওরা লন্ডনে তারেকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে। কাজেই আপনাদের আজ প্রস্তুত থাকতে হবে।
সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল; বিশেষ বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য।
সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন পারভেজের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হাকিম সম্রাট।
আওয়ামী লীগে ভাঙন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আমেরিকার ষড়যন্ত্র জাসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক বঙ্গবন্ধু হত্যা