রাবি’তে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির হার কমছেই!
২০ আগস্ট ২০২০ ০৯:০৫
রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির হার আশঙ্কাজনক হারে কমছে। শুরুর দিকে উপস্থিতি ৫০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও এখন সেটা কোনো কোনো বিভাগে ৪০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, মোবাইল ডাটার মূল্য বেশি ও গতি কম হওয়ায় শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ অনলাইন ক্লাসের বাইরে ছিল। এর মধ্যে বন্যায় শিক্ষার্থীদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তবে কিছু শিক্ষকের দাবি, অনলাইন ক্লাসের ব্যপারে শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক মনোভাবও উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে দায়ী।
গত মার্চে দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হলে ওই মাসেই বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ও বন্ধ হয়ে যায় ওই সময়। টানা সাড়ে তিন মাস সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের। শেষ পর্যন্ত জুনের শেষ দিক থেকে অনলাইনে ক্লাস নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। নানা পর্যবেক্ষণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরু হয় ৯ জুলাই থেকে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস বন্ধ ছিল। ৬ আগস্ট থেকে ফের শুরু হয়েছে এই অনলাইন ক্লাস।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯টি বিভাগ ও ছয়টি ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। ৯ জুলাই থেকে সবগুলো বিভাগ ও ইনস্টিটিউটেই শুরু হয় অনলাইন ক্লাস, যদিও দুয়েকটি বিভাগে এখনো ক্লাস শুরু না হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথম দিকে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ছিল ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। ঈদুল আজহার বন্ধ শেষে সেই উপস্থিতি যথেষ্টেই কমে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির বিষয়টিতে অনুষদভেদে বেশ পার্থক্য দেখা গেছে। যেমন— প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৮০ থেকে ৭০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। সে তুলনায় বিজ্ঞান অনুষদে উপস্থিতি শুরু থেকেই কিছুটা কম। এখন তা আরও কমেছে। অন্যদিকে কৃষি অনুষদ ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৪০ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশের গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া কলা অনুষদের দুয়েকটি বিভাগে ক্লাস শুরু না হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ অনুষদে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি। জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদেও উপস্থিতির হার নিম্নমুখী বলে অনুষদ সূত্রে জানা গেছে। ব্যবসায় অনুষদে উপস্থিতি ৩৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্লাসে অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করছেন। তাদের অনেকেরই ল্যাপটপ কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের গতি নিয়েও সমস্যা শুরু থেকই। ডেটা কেনার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সঙ্গতির বিষয়টি তো রয়েছেই। সবশেষ বন্যার কবলে যারা পড়েছেন, তাদের জন্যও উপস্থিতি আশঙ্কজনক হারে কমেছে।
শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ অনলাইন ক্লাসের বাইরে থাকার পেছনে ইন্টারনেট গতি ও বন্যা সমস্যার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহকেও দায়ী করছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, অনলাইন ক্লাস উপস্থিতি হিসেবে কাউন্ট করা হবে না। তাই অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডিন বলেন, কৃষি অনুষদের একটি বিভাগে প্রায় ২২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাইলে শতাধিক শিক্ষার্থী বিপক্ষে মতামত দেয়। এছাড়া সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও কলা অনুষদ ও চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ক্লাস না করার পক্ষে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সেখানকার শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও কমছে।
অনলাইন ক্লাস নিতে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য তিন সদস্যদের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির চেয়ারম্যান ও ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক অধ্যাপক আবু বকর মো. ইসমাইল সারাবাংলাকে বলেন, স্মার্টফোন না থাকা, গ্রামে ফোরজি না পাওয়া, ডেটার উচ্চ মূল্য— এসব কারণে প্রথম থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বাইরে ছিল। সম্প্রতি বন্যার কারণে উপস্থিতির হার আরও কমে গেছে। সেটা ৩৫ শতাংশের মতো হবে।
আইকিউএসি’র এ পরিচালক আরও বলেন, বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা খুব দ্রুত অনুষদের ডিন ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের সঙ্গে বসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, আমাদের অনলাইন ক্লাস শুরু একমাস শেষ হয়েছে। আমরা বিভাগগুলো থেকে গত একমাসের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।