মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার রায়হান কবির মুক্তি পাচ্ছেন
২০ আগস্ট ২০২০ ১৪:৪০
ঢাকা: অভিবাসীদের প্রতি অসদাচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার বাংলাদেশি তরুন রায়হান কবির শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে না পারায় তাকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালেশিয়া পুলিশ। আগামী সপ্তাহেই তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে বলে তার ব্যক্তিগত আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনা ও সেলভারাজ চিন্নিয়াহ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সুমিতা শান্তিনি কিষনা জানান, রায়হানের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। তাই রায়হানকে জেলে পাঠানো যায়নি। তিনি পুত্রজায়ায় পুলিশি হেফাজতেই রয়েছেন। সেখান থেকেই ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে বাংলাদেশে পাঠাতে এরই মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো হয়েছে। সেখানে তার নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। দুয়েকদিনের মধ্যে টিকিট কনফার্ম করা গেলে তার দেশে ফেরা নিশ্চিত হবে। হয়তো এ প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহেই শেষ হবে।
এর আগে গত ৫ আগস্ট মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালকক খায়রুল দিজাইমি দাউদ সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৩১ আগস্ট রায়হানকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে, রায়হান আর কোনোদিন মালয়েশিয়া যেতে পারবেন না। তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় রায়হান কবিরের বাড়ি। বাবা-মা আর দুইভাই নিয়ে তার পরিবার। রায়হানে বাবা শাহ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে ছোট থেকেই প্রতিবাদী। সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছে। নিজে কখনও অন্যায় করেনি। আমাদের বিশ্বাস ছিল আমাদের সন্তান মুক্তি পাবে, ফিরে আসবে। দ্রুত ফিরে আসুক সেই কামনা করছি।’
করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় গত ২৪ জুলায় বাংলাদেশি নাগরিক রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করে মালয়েশিয়া পুলিশ। টানা ১৪ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর গত ৬ আগস্ট তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে হাজির করে পুলিশ আরও ১৪ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বুধবার (১৯ আগস্ট) তার রিমান্ড শেষ হয়।
লকডাউন চলাকালে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরনের কথা গত ৩ জুলাই আন্তজার্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে জানান। আল জাজিরা তাদের ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়। আল-জাজিরায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের আটক ও জেলে পাঠানোর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে বক্তব্য দেন রায়হান কবীর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ তাকে গত ২৪ জুলাই গ্রেফতার করে।
অভিবাসন নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করা সংগঠনগুলো ওই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং রায়হানের মুক্তির দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যৌথ চিঠি দেয়। অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশে ২১ সংগঠনসহ আন্তজার্তিক বিভিন্ন সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এই গ্রেফতারের নিন্দা জানায়।
গ্রেফতারের আগে রায়হান এক ভিডিও বার্তায়ও বলেছিলেন, ‘তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তিনি যা বলেছেন তা মিথ্যা নয়। প্রবাসীদের ওপর চরম বৈষম্যও নীপিড়নের কথা তিনি বলেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশে থাকা সকল প্রবাসীকর্মী ভালো থাকুন এবং সম্মান নিয়ে বাস করুন।’ ওই ভিডিওতে তিনি বাংলাদেশের সকল স্তরের নাগরিককে পাশে চেয়েছিলেন।
অভিবাসী আল-জাজিরা কর্মী গ্রেফতার মালেয়েশিয়া মুক্তি রায়হান কবির সাক্ষাৎকার