Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিএনপি সরকার জড়িত না থাকলে আলামত নষ্ট করলো কেন?’


২১ আগস্ট ২০২০ ১১:৫৮

ঢাকা: ২১ আগস্টের সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় বিএনপি সরকার যদি জড়িত না-ই থাকে, তাহলে কেন ঘটনাস্থলের সব আলামত নষ্ট করেছিল— এ প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্যই ছিল আমাকে হত্যা করা। আর বিএনপি সরকার যদি এর সঙ্গে জড়িত না-ই থাকবে, তাহলে তারা আলামতগুলো কেন নষ্ট করলো? ওই গ্রেনেড হামলার পরই সিটি করোপারেশেনের মেয়র তার লোকজন নিয়ে এসে পুরো এলাকা ধুয়ে ফেলেছিল কেন?

শুক্রবার (২১ আগস্ট) সকালে দেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম সেই হামলায় নিহতদের স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এই অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন।

সেদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ আয়োজনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ছিল। তাদের পক্ষ থেকে সারাদেশব্যাপী একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছিল। তারই বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ছিল।

তিনি বলেন, এ ধরনের গ্রেনেড হামলা বোধহয় পৃথিবীতে আর কখনো কোথাও ঘটেনি। সাধারণত রণক্ষেত্র বা যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমাদের সেই র‌্যালিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই এই ঘটনাটা ঘটিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু সেইদিন আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। সেইসঙ্গে অনেক নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। অনেকে আহত হয়ে পরে মারা গেছেন। আহতরা স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা দিনের পর দিন ভোগ করে অনেকে পঙ্গু ও অসহায় হয়ে জীবন অতিবাহিত করছে।

সেদিন নিজের বেঁচে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মোহাম্মদ হানিফভাইসহ সবাই আমাকে যেভাবে ঘিরে রেখেছিল— আমাদের নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে সেদিন আমাকে রক্ষা করেছিল। আমি জানি না, এরকম অবস্থায় পড়ে কোনো মানুষ বাঁচতে পারে কি না। আল্লাহ বোধহয় হাতে তুলে আমাকে বাঁচিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সেই হত্যাকাণ্ড শুধু রাষ্ট্রপতিকে নয়, একটি পরিরবার এবং সেইসঙ্গে আমাদের পরিবারের সদস্য যারা, তাদেরও নির্মমভাবে হত্যা করে। ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। এরপর আমাদের আওয়ামী লীগের অসংখ্যা নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কত লাশ যে আমাদের টানতে হয়েছে!

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন অভিযোগ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি আমাদের নেতাকর্মীদের ও দেশবাসীকে স্মরণ করাতে চাই— জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, তাদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। ওই চক্রান্তের সঙ্গে খন্দকার মোশতাক যেমন জড়িত, সেই সঙ্গে জিয়াউর রহমান গং, তারাও জড়িত। কারণ খন্দকার মোশতাক অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান করে। আবার জিয়াউর রহমানই সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয় এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, একটা পরিবারকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করেছে, তাদেরকেই বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়, পুরস্কৃত করে। তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠতাও ছিল। খুনি কর্নেল রশিদ ফারুক বিবিসির ইন্টারভিউয়ে খুব স্পষ্টভাবে বলেছে। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খুনিদের যে সম্পর্ক ছিল, এটা তো আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

২১ আগস্ট হামলায় জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার সন্তান তারেক রহমান জড়িত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই ২১ গ্রেনেড হামলা ঘটায় এবং এর সঙ্গে তার ছেলে তারেক রহমান জড়িত। যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, সেটা তাদের কথাতেই বের হয়ে এসেছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, এক একটা ঘটনা ঘটাবার আগে খালেদা জিয়া যে বক্তৃতাগুলো দিয়েছে, সেগুলোই প্রমাণ করে তারা এসব হামলায় জড়িত। কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। সেই বোমা উদ্ধার হওয়ার আগে খালেদা জিয়া বলেছিল, আওয়ামী লীগ একশ বছরেরও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে খালেদা জিয়ার বক্তৃতা ছিল— শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারবে না। এই ভবিষ্যৎবাণী খালেদা জিয়া কিভাবে দিয়েছিল? কারণ তাদের চক্রান্তই ছিল আমাকে তারা হত্যা করে ফেলবে। আমাকে হত্যা করলে তো আমি আর কিছুই হতে পারব না— এটাই তাদের চক্রান্ত ছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার পর শেখ হাসিনার সন্তানকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। আপনারা জানেন, আমেরিকার আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে কিডন্যাপ করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আমেরিকার এফবিআইয়ের তদন্তে সেটা ধরে পড়েছে।

আওয়ামী লীগেই দেশের মানুষকে প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ দিয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মানুষের ভাগ্য পরিবতর্ন এবং মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ২১ বছর পর সরকারে এসেছিলাম (১৯৯৬ সালে)। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই এ দেশের মানুষ প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছিল এবং সরকার যে জনগণের জন্য কাজ করে, সেটা উপলব্ধি করতে পেয়েছিল। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছিল। ২০০১ এক গভীর চক্রান্ত করে আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দেয় নাই। আমরা যে ভোট পাইনি, তা নয়। কিন্তু সেখানে একটা বিরাট ষড়যন্ত্র ছিল। আর তারপর ২০০৪ সালে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাবার চেষ্টা।

২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেনেড হামলা টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর