এ মেয়াদেই তারেকসহ খুনিদেরও রায় কার্যকরের প্রত্যয় আ. লীগের
২১ আগস্ট ২০২০ ১৭:৩৪
ঢাকা: সরকারের চলমান মেয়াদেই বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে একুশে আগস্টের খুনিদেরও বিচারের রায় কার্যকর করার প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের। এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন ক্ষমতাসীন দলটি।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) গ্রেনেড হামলা দিবসের ১৬ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বর্বর সেই হামলায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে গ্রেনেড হামলার শিকার দলটি।
আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোট আমলে এই জঘন্য হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায় আওয়ামী লীগের তখনকার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন, আহত হয়েছিলেন কয়েকশ মানুষ। সেদিন প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই হামলায় তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দিবসটি স্মরণে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে দলের আলোচনা সভা বক্তব্য রাখেন। সভার শুরুতে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তার আগে, সকাল ৯টার দিকে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় দলটির নেতারা। আওয়ামী লীগ ছাড়াও সহযোগী , ভ্রাতৃপ্রতিম ও সেদিনের ঘটনার আহতরা শ্রদ্ধা জানিয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহতদের নেতাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেদিনের হামলার ঘটনা স্মরণ করে বলেন, ‘ইতিহাস এ জনপদে বারবার ফিরে আসে হারানোর বেদনা নিয়ে। বারবার এখানে আগস্ট আসে বেদনার নীল রং ধারণ করে। আমাদের বুকে জ্বলছে পচাত্তরের কালরাতে সপরিবারে জাতির পিতাকে হারানোর ক্ষত। বুকের গহীনে সে জ্বলন্ত চিতায় ঘৃতাহুতি দিতে ফিরে আসে একুশে আগস্ট। বিশ্ব মানবতা অবাক বিস্ময়ে আবারও দেখল রাজনীতির নামে নৃশংসতা। দেখলো, কিভাবে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়। দেখলো, কীভাবে নিরাপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় পবিত্র মাটি। যে মাটি পবিত্র হয়েছিল একাত্তরে লাখো শহীদের রক্তে। যে মাটি বঙ্গবন্ধুর রক্তে ভিজে ছিল ৭৫’এ। সে মাটিতে আবারো রক্ত বয়ে যায় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। তাবৎ বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখল, সেদিন গোধূলির লাল আভা আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রক্ত কীভাবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ একাকার হয়ে গিয়েছিল।’
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিচারিক প্রসঙ্গ তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে যা যা করার সবই করেছে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার। জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে নিরপরাধ এক ব্যক্তির ওপর দায় চাপায়। নষ্ট করে হামলার আলামত। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে তদন্ত করতে আসতে দেওয়া হয়নি। সহযোগিতা করেনি এফবিআইকে।’
বিচারপতি জয়নুল আবেদিনকে দিয়ে করা হয় এক সদস্যের তদন্ত কমিশন। সে কমিশন হাস্যকরভাবে এ হামলার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশকে দায়ী করে দায়িত্ব শেষ করে। এভাবে এ দেশের বিচার ব্যবস্থাকে তারা প্রহসনে রূপান্তরের অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু ইতিহাস বড় নির্মম; যাকে তারা সেদিন টার্গেট করেছিল তার হাত দিয়েই শুরু হয় নির্মমতার বিচার। এরইমধ্যে রায় হয়েছে। আপীল বিভাগে রয়েছে বিষয়টি। ইনশাল্লাহ, শেখ হাসিনার সরকারের এই মেয়াদেই বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ১৯৭৫’এর খুনিদের মত একুশে আগস্টের খুনিদেরও বিচারের রায় কার্যকর করা হবে। যারা বিদেশে আছে বিশেষ করে তারেক রহমানসহ খুনিদের ফিরিয়ে আনা হবে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সেদিনের ট্রাকের ডালায় লেগে পাশে পড়ে থাকা দুটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়নি। হলে কি হতো জানি না? মহান স্রষ্টা আপনাকে হায়াত দিয়েছেন। আপনি বারবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা এক মৃত্যুঞ্জয়ী বীর। আপনি না থাকলে কেমন হতো, আজকের বাংলাদেশ ভাবতে পারি না। আপনি আছেন বলেই আজ উন্নয়ন অগ্রগ্রতির রোল মডেল বাংলাদেশ। সীমান্ত বিজয়, সমুদ্র বিজয়, মহাকাশ বিজয় আপনার হাত ধরেই। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আপনি আশ্রয় দিয়ে উদারতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। উন্নয়নের পথে বাধা এক এক করে অপসারিত হচ্ছে। দেশের ভাগ্য বদলের ম্যাজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন আপনার মাধ্যমেই হচ্ছে। আর এদিকে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র গুজব, অপপ্রচার, আর মিথ্যাচারের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। এদেশের মানুষের চোখের ভাষা মনের ভাষা অনায়সে বুঝতে পারেন বলে আপনি আসন করে নিয়েছেন জনমানুষের মণিকোঠায়। আপনি আমাদের আস্থার সোনালি দিগন্ত। সংকটে ও দুর্যোগে এক পরীক্ষিত এক মানবিক নেতৃত্ব।’
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলাটি নানা প্রতিকূলতার পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেয় বিচারিক আদালত। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয় আরও ১১ জনের। রায়ের সময় আসামিদের মধ্যে ৩১ জন কারাগারে ছিলেন; পলাতক ছিলেন ১৮ জন। পরে দণ্ডিত দুই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১৬ জন থাকেন পলাতক। তারেক ছাড়া পলাতকরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (যাবজ্জীবন), কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (যাবজ্জীবন), অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (২ বছর কারাদণ্ড), ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন আহমদ (২ বছর কারাদণ্ড), হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ (মৃত্যুদণ্ড), মো. ইকবাল (যাবজ্জীবন), জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন (মৃত্যুদণ্ড), মহিবুল মুত্তাকিন (যাবজ্জীবন), আনিসুল মোরসালিন (যাবজ্জীবন), মোহাম্মদ খলিল (যাবজ্জীবন), মাওলানা লিটন (যাবজ্জীবন), জাহাঙ্গীর আলম বদর (মৃত্যুদণ্ড), মুফতি শফিকুর রহমান (যাবজ্জীবন), মুফতি আব্দুল হাই (যাবজ্জীবন) ও রাতুল আহমেদ বাবু (যাবজ্জীবন)।
২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ গ্রেনেড গ্রেনেড হামলা তারেক জিয়া বোমা হামলা শেখ হাসিনা