Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জি কে শামীমের জামিনে ডেপুটি অ্যাটর্নি রুপার সম্পৃক্ততার অভিযোগ


২১ আগস্ট ২০২০ ২২:৫৪

ঢাকা: হাইকোর্টে ভূয়া নাম ব্যবহার ও জালিয়াতি করে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত জি কে শামীম জামিন নেন। আর এই জামিন কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপার বিরুদ্ধে। একইসঙ্গ দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এমনই একটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের নিজ কার্যালয় থেকে প্রভাবশালী এই ঠিকাদারকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। একইসঙ্গে তার সাত দেহরক্ষীকেও গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় শামীমের কার্যালয় থেকে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র, নয় হাজার ইউএস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল জব্দ করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচার আইনে তিনটি মামলা করে র‍্যাব।

বিজ্ঞাপন

এরপর জি কে শামীমের অবৈধ সম্পদের খোঁজে ৩০ সেপ্টেম্বর ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকমিটি গঠন করে দুদক। সেই কমিটি অনুসন্ধান শেষে গত বছরের ২১ অক্টোবর জিকে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। শুধু তাই নয়, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন ২৫টির মতো অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাও করেছে দুদক। বর্তমানে ক্যাসিনো ঘটনার সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান রয়েছে।

অপরদিকে জিকে শামীমের জামিন কেলেঙ্কারি নিয়ে দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা ১২ বছর ধরে আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সরকারি পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। ক্যাসিনো সম্পৃক্ত ঠিকাদার জি কে শামীমের হাইকোর্ট বিভাগে জামিন লাভে সহায়তা করে ঘুষ গ্রহণ করেছেন।

হাইকোর্ট বিভাগের যে বেঞ্চে জি কে শামীমের জামিন হয়েছে সেই কোর্টে জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কোর্টের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় জি কে শামীম নামের পরিবর্তে এস এম গোলাম কিবরিয়া ছাপানোর ব্যবস্থা করেন তিনি।

আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চের কার্যতালিকায় জি কে শামীমের জামিনের আবেদনটি ইন রি টেন্ডার নম্বর ৫০৩৪২৫/২০২০ এবং আইটেম নম্বর ৩৩০ হিসেবে আসে। এরপর হাইকোর্ট বিভাগ রুল ও জামিন প্রদান করেন। এমনকি জামিন হওয়ার পর জামিন আদেশ বাতিলের জন্য আপিল বিভাগে আপিল দায়েরের জন্য জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। আর বিষয়টি প্রায় একমাস গোপন রাখেন তিনি।

এরপর সবমহলে বিতর্কের জন্ম দিলে গত ৮ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চের সম্পূরক তালিকায় বিষয়টি ক্রিমিনাল কেস নং ৬২৬৪/২০২০ হিসেবে আসে এবং মহামান্য আদালত রুলটি ডিসচার্জ করেন এবং জামিন আদেশটি প্রত্যাহার করেন। জি কে শামীমের জামিনের বিষয়ে বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে তদন্তাধীন আছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তার ছোট বোন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ছোট বোনের শাশুড়ি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হওয়ার সুবাদে তিনি আদালতে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ইতোপূর্বে মাদক সম্রাট আমিন হুদার জামিন কেলেঙ্কারিতে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্ত চলছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এমনকি লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি কিনে সেখানে মেয়েকে ব্যারিস্টারি পড়াতে দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিকে শামীম তার নাম গোপন করে জামিন নেয়। আর জামিন দেয় আদালত। আমার কিছু করার নেই। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে আমি ৮ মার্চ কোর্টকে জানাই এবং জামিন বাতিল হয়। এখানে দুর্নীতি করলে আসামিপক্ষের লোকজন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আমি প্রধান বিচারপতিসহ সব জায়গায় চিঠি দিয়েছি। আমার প্রতিপক্ষ আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

আপনার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে আরও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সব মিথ্যা।’

অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগও মিথ্যা। আমি সৎ এবং সততার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমিও চায় যারা দুর্নীতি করেছে তাদের শাস্তি হোক।’

এ বিষয়ে কথা হয় আপলি বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ ওঠা ভালো না। এ ছাড়া একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব জামিন হওয়ার পর অফিসকে জানানো। তবে সেটি যদি তিনি না করেন তাহলে অন্য কিছু। আর বিষয়টি নিয়ে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই জিকে শামীমের জামিনের সঙ্গে কারা জড়িত আর কীভাবে জামিন হলো সেটা তদন্ত করার দাবি রাখে। আর তদন্ত করলেই জানা যাবে সেদিন কী ঘটেছিল, আর কে বা কারা এটির সঙ্গ জড়িত?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাসিনো ঘটনায় আমাদের অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান। ইতোমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসছে সেগুলো নিয়েও আমাদের টিম কাজ করছে। অনুসন্ধান বা তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা আসবে তাদের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রুপার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’

অন্যদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুদকে যেহেতু অভিযোগ গেছে তাহলে দুদক তাদের কাজ করবে। আর আইন মন্ত্রণালয় তাদের কাজ করবে।’

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জালিয়াতি করে জি কে শামীমের জামিনের তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। হয়ত তদন্ত শেষ হলে বিষয়টি জানতে পারব। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নেব।’

ক্যাসিনোকাণ্ড ক্যাসিনো জি কে শামীম

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর