‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়’
২২ আগস্ট ২০২০ ১৭:৩০
ঢাকা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘যখনই কোনো অপরাধীর বিচার করবেন না, তাদের প্রশ্রয় বা দায়মুক্তি দেবেন, তখন অপরাধীরা ভেবে নেয় অপরাধ করলে কিছুই হয় না, করে যাই। তবে আইনের প্রশ্নে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
শনিবার (২২ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সংস্কার কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
রেজাউল করিম বলেন, ‘বিচার বিভাগের কার্যকরভাবে স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে কাজ করার জায়গা আছে। একাডেমিকালি বিচার বিভাগ এখন কার্যত সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে হলে প্রয়োজন শক্তিশালী বার (আইনজীবী সমিতি)। তবে বারের রাজনীতির প্রভাব কিছু কিছু সময় এতো বেশি হয়ে যায়, তখন মনে হয় এটি কোন রাজনৈতিক কার্যালয় হয়ে গেছে। এই অবনতি সম্প্রতি ঘটেছে। এই অবনতি থেকে আমাদের উত্তরণ অবশ্যই প্রয়োজন, না হলে আমাদের বিচার বিভাগ থাকবে না।’
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন ও শক্তিশালী না হয়, তাহলে সে দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসন অর্থবহ হবে না। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় ভীষণভাবে বিশ্বাস করে। আমার পক্ষে রায় এলে ঠিক আছে নইলে ঠিক নেই, বিচার বিভাগ নিয়ে এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
বিচার না করে অপরাধীদের দায়মুক্তি দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর একটি ইনডেমনিটি অর্ডার জারি করেছিলেন খন্দকার মোশতাক। তাতে দু’টি পার্ট ছিলো। যার একটিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কৃত কর্ম নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না। আরেকটিতে বলা হয়েছিলো ওই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের কৃতকর্ম বৈধ নাকি অবৈধ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। এটি কোনো আইন ছিল না এবং এটি কার্যকর হয়নি। কিন্তু ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল সংসদে একটি বিল আসলো। এরপর ৬ এপ্রিল এই বিলের ওপর আলোচনা হলো। কিন্তু সেই আইন করার বিষয়ে বিরোধিতার পরও ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স পাশ করা হলো এবং ৯ এপ্রিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সেটিতে স্বাক্ষর দিয়ে আইনে পরিণত করলেন। যার ফলাফল দাঁড়ালো বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলহত্যায় জড়িতদের আর বিচার করা যাবে না। এরপর দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটলো।’
‘তাই পুলিশ বা র্যাবের দ্বারা যে দলেরই নেতা-কর্মীরা ক্রসফায়ারের শিকার হোক না কেন, তাদের (আইনশৃঙ্খলাবাহিনী) জবাবদিহিতা করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের সাতখুনের ঘটনার পর অনেকেই বলেছেন বিচার হবে না। সেই দাম্ভিকতা কিন্তু চূর্ণ হয়েছে। তিন সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। বিডিআরকে নিয়ে অনেক শক্তি দেখানোর চেষ্টা হয়েছিলো কিন্তু তার বিচার হয়েছে। সে কারণেই অপরাধী যে দলেরই হোক তাদের আমরা প্রশ্রয় দেবো না’, বলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সম্পাদক।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের সঞ্চালনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতারা।