Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা খুঁজতে হবে’


২২ আগস্ট ২০২০ ১৯:০৫

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, হ্রাসকৃত করের হার বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু আমাদের দেশে কর-জিডিপি’র আনুপাতিক হার এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। এক্ষেত্রে আমাদের বিদ্যমান করদাতাদের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে হবে।

শনিবার (২২ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের গতিপ্রবাহে কোভিড-১৯ এর প্রভাব: সমস্যা ও উত্তরণ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশস্থ জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি। ওয়েবিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন জোঅ্যান ওয়াগনার, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বিল্ড’র চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান, জেট্রো’র বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি ইউজি এন্ডো, আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মহিউদ্দিন মোনেম, অ্যামচেম’র সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, স্যামসং-ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আলম আল মাহবুব অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ আকর্ষণে সংস্কারের মানসিকতা চলে এসেছে। তবে এ বোধদয় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ তাদের মাধ্যমেই নীতিগুলোর বস্তবায়ন হয়ে থাকে। আগামী বছরের মধ্যে বৈশ্বিক ব্যবসা পরিচালনার সূচকে বাংলাদেশ ডাবল ডিজিটে উন্নীত হবে।’

তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই খেলাপি আইন ও কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা হবে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর কাঠামাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত। এছাড়া গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ শেষ হলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সক্ষমতাও বাড়বে।’

বেজা‘র চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘এসইজেড অঞ্চলে খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতে বিনিয়োগ করলে উদ্যোক্তারা ২০ শতাংশ ক্যাশ ইনশিয়েটিভ পাবে। মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি কমে ১০ শতাংশের নিচে আানা হবে।’ বেজা, বিডা এবং হাইটেক পার্ক প্রভৃতি কর্তৃপক্ষের আরও ক্ষমতায়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নীতিমালার সংস্কার এবং বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো একান্ত আবশ্যক।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেজা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত কম মূল্যে জমি দিয়েছে, যা ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক কম। বাণিজ্য সম্প্রসারণে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ এ সময় তিনি দেশে নতুন নতুন বন্দর স্থাপন এবং বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও আমরা সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি।’ তিনি জানান, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে, যেখানে মার্কিন বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী, কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ৪০ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৫৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসে দাঁড়াতে পারে।’

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম. মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘আঙ্কাটার্ডের তথ্য মতে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস এবং ২০২১ সালে এই হার আরও ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এশিয়া অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রায় ৪৫ শতাংশ কমে যেতে পারে।’

বাংলাদেশস্থ জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি বলেন, ‘জাপানি বিনিয়োগকারীর বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। ২০১৯ সালে এশিয়াতে জাপানি বিনিয়োগ ছিল ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশে শূন্য দশমিক শূন্য নয় শতাংশ জাপানিজ বিনিয়োগ এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরভিত্তিক অর্থনীতি এবং এশিায় অঞ্চলে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনে জাপানের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে ট্যাক্সেশন, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ রিফর্ম খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন জোঅ্যান ওয়াগনার বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে এবং কোভিড-১৯ এর কারণে ডিজিটাল অর্থনীতি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বায়ো-টেকনোলোজি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে কাজ করতে পারে।’

জেট্রো’র বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি ইউজি অ্যান্ডো বলেন, ‘বর্তমানে ৩১০টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে, যা গত ১০বছরে চারগুণ রেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে সারা পৃথিবীতে ৩৩ শতাংশ জাপানি বিনিয়োগ কমেছে।’

বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশকে কর নীতিমালার সংস্কার ও আধুনিকায়ন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করাসহ সার্বিকভাবে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে আরও বেশি গুরুত্বারোপের আহ্বান জানান তিনি।

অ্যামচেম’র সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পক্ষ থেকে হয়রানি মুক্ত সেবা নিশ্চিতকরণের আহ্বান জানান এবং কাস্টমস আইন ও খেলাপি আইনের যুগোপযোগীকরণের ওপর জোরারোপ করেন।

বিল্ড’র চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে স্বাস্থ্যখাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে।’ তিনি মনে করেন, সম্প্রতি চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রবেশাধিকারের বিষয়টি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে দ্রুততম সময়ে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তাবয়ন খুবই জরুরি।

করদাতা করের বোঝা খুঁজতে হবে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নতুন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর